পাখি লালনপালন করার টিপস
সভ্যতা উন্নয়নের ক্রমবিকাশের ধারা থেকে এটা সর্বস্বীকৃত যে, সারা
বিশ্বে তথা আমাদের দেশে গৃহপালিত পশু পাখি প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে মানুষের নানাবিধ
কল্যাণে দৈনন্দিন জীবণের প্রয়োজনে ব্যবহার হয়ে আসছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, সৌখিন
সমাজের বিনোদন, মানুষের পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাদ্যসামগ্রী, কৃষক পর্যায়ে পারিবারিক
আয়, বৈদেশিক আয়, বেকার সমস্যা সমাধানে সুলভ সহজসাধ্য কর্মসংস্থান,পশুপাখির খাদ্য হিসেবে
অনেকগুলো কৃষি উপজাত সামগ্রীর পর্যাপ্ত ব্যবহার, ফসল আবাদের অনুপযুক্ত জমির সুস্থ ব্যবস্থা,
মানুষ ও প্রাণীর রোগ প্রতিষেধক উদ্ভাবন ও কার্যকারিতা পরীক্ষায় গবেষণাগারের ক্ষুদ্র
প্রাণী সামগ্রী, কৃষি শিল্পের কাচাঁমাল ও প্রসাধনী তৈরীর সস্তা উপকরণ এবং দেশ ও অঞ্চলভেদে
অপরাপর সহায়ক উৎস্য হিসেবে গৃহপালিত পশুপাখি নিত্য প্রয়োজনে কমবেশী ব্যবহার হয়। পাখি কেনার পূর্বে আপনাকে বুঝতে হবে, এই অসম্ভব সুন্দর প্রাণীদের পুষতে হলে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। যেহেতু এটাই আপনার প্রথম পাখি পোষা, সেহেতু আপনাকে সঠিক পাখি বেছে নিতে ও পরবর্তীতে
তাকে প্রশিক্ষণের জন্য অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে।
নিচের বিষয়গুলো জানা থাকলে তা আপনার অনেক কাজে আসবে-
পাখি পালনের খরচঃ
পাখি পালন করতে হলে, পাখির জন্য কিছু খরচ ও আছে। আপনি ভাবতে পারেন
শুধু যে, পাখি কিনলেই খরচ শেষ অবে তা নয়, ওদের জন্য ও আলাদা কিছু খরচ রয়েছে। যেমন-
বরং পাখির জন্য খাঁচা, খাবার, সরঞ্জাম, এবং খেলনা কেনারও খরচ রয়েছে। পাখি কিনতে গিয়ে আপনার খরচের সীমাবদ্ধতার
কথা চিন্তা করলে চলবে না। পাখি আকারে বড় হলে তার জন্য বড় খাঁচার দরকার হবে এবং বেশী যত্নের প্রয়োজন। ছোট পাখি সহজেই রাখা যায়। টাকার জন্য কখনও গুণগত মান বিসর্জন দেবেন না। সস্তায় পেয়ে কখনই অসুস্থ ও খারাপ জাতের পাখি কিনবেন না।
হাতে পোষা পাখিঃ
ওয়েবসাইটে আপনি অনেক পাখির হাট পাবেন যেখানে লেখা আছে ’’হাতে পোষা পাখি” । এর মানে কী? তোঁতা পাখির ক্ষেত্রে এই শব্দটি বেশী ব্যাবহার হয়, কিন্তু অন্যান্য প্রাণীর ক্ষেত্রেও
ব্যাবহার হতে পারে। এর মানে পাখিটি মানুষের পোষা এবং জন্মের পর থেকে হাতে খাবার খাওয়ানো হয়েছে। এতে পাখিগুলো অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ
আর আদুরে হবে এবং সহজেই পোষ মানবে।
পাখির খাঁচা কেনাঃ
খাঁচা কেনার সময় অবশ্যই লক্ষ রাখবেন যে, আপনার পাখিটার আকার কি রকম
বড় বা ছোট। পাখির খাঁচার আকার পাখির চাইতে অনেক বড় হওয়া প্রয়োজন, কেননা পাখিটিকে খাঁচার মধ্যে চলাচল করতে হবে। এটাই পাখির একমাত্র ব্যায়াম। তাই যখন আপনি খাঁচা কিনবেন তখন সবচেয়ে বড় খাঁচাটি কিনবেন। খাঁচার কাঠিগুলোর
মধ্যে ফাঁকা জায়গা সঠিক মাপের হতে হবে। কাঠির ফাঁকা জায়গা ভুল মাপের হলে তা পাখির জন্য শুধু অস্বস্তিকরই হবে না, বরং তাতে পাখিটি মারাত্মকভাবে
আহত হতে পারে। আড়াআড়ি সজ্জার খাঁচা তোঁতা পাখির জন্য বেশ প্রচলিত, কারণ এরা খাঁচার পাশ বেয়ে উপরে উঠতে পছন্দ করে। ছোট পাখিদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি খাঁচার প্রয়োজন নেই কিন্তু এগুলোর খাঁচা উঁচু হওয়া প্রয়োজন। সহজে পরিস্কার করার জন্য খাঁচার নিচে টেনে বের করা যায় এমন ট্রে থাকলে ভালো।
পাখির খাবারঃ
পাখি সাধারণত বিভিন্ন প্রকার শস্যদানা যেমন-গম, মটর, খেসারি, সরিষা, ভুট্টা, কলাই, ধান, চাল,কাউন, জোয়ার ইত্যাদি খেয়ে থাকে। এরা খোলা আকাশে উড়ে বেড়ায় এবং পছন্দমত স্থান থেকে প্রয়োজনীয়খাদ্য যোগাড় করে থাকে। এছাড়া কবুতরের খাবারে ১৫%-১৬% আমিষ থাকা প্রয়োজন। মুরগির জন্য তৈরি সুষম খাবার খাওয়ালে সুফল পাওয়া যায়। কবুতরের বাচ্চার দ্রুত বৃদ্ধি, হাড় শক্ত ও পুষ্টি এবং বয়স্ক কবুতরের সুস্বাস্থ্য
ও ডিমের খোসা শক্ত হওয়ার জন্য ঝিনুকের খোসার গুঁড়া, চুনাপাথর, শক্ত কাঠ কয়লা গুঁড়া, হাড়ের গুঁড়া, লবণ এসব মিশিয়ে ‘গ্রিট মিকচার’ তৈরি করে খাওয়াতে হবে। প্রতিটি কবুতর প্রতিদিন গড়ে ৩৫-৬০ গ্রাম দানাদার খাদ্য খেয়ে থাকে। এছাড়াও প্রতিদিন কিছু কিছু কাঁচা শাক-সবজি কবুতরকে খেতে দিলে ভাল হয়।
পাখি কোথায় থেকে কিনবেনঃ
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনলাইন মাধ্যম অনেক বিকশিত হয়েছে এবং কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই আপনি আপনার পছন্দের জাতের পাখি অনলাইনে খুঁজে পাবেন। আপনি যে ধরনের পাখি কিনবেন সেরকম পাখি বিক্রি করার জন্য পাখির অনলাইন বাজারে অনেক সত্যিকারের বিক্রেতা রয়েছেন যারা তাদের পাখির ছবি দিয়ে দিচ্ছেন এবং এর প্রকৃতি ও আচরণ সম্পর্কেও লিখছেন। এটা পাখির মেজাজ বুঝতে আপনাকে সহায়তা করবে। বাংলাদেশে আপনি সত্যিকারের পাখির বিক্রেতা খুঁজে পেতে এ যেতে পারেন।
পরিশেষেঃ
আপনার কারণ যেমনটাই হোক না কেন, আপনার পছন্দের পাখি, কবুতর, তাদের জন্য খাবারের মিশ্রণ এবং তাদের লালন পালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় যেকোন ধরণের সরঞ্জাম কেনার জন্য আজই ভিসিট করুন AponHut.com।ধীরে সুস্থে শুরু করুন, আপনার পাখিগুলোকে নিজের সন্তানের মত করে ভালোবাসুন।