শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো

 প্রকাশ: ০৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ১০:৪০ অপরাহ্ন   |   শখ, খেলাধুলা এবং শিশু , টিপস ও গাইড

শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো

শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানোর উপকারিতা কি?

 

চিকিৎসকদের মতে, শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো খুব ভাল শরীরচর্চা। এই অভ্যাস রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, ফলে হৃদ্‌রোগের আশঙ্কা কমে এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালনও ভাল হয়। নিয়মিত সাইকেল চালালে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বাড়ে। সাইকেল চালানোর সময়ে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছলে বাড়তে থাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার। শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প নেই। বিশেষজ্ঞরা আবার নিয়মিত হাঁটার কথাও বলেন। তবে অনেকেই ব্যস্ততার কারণে ব্যায়াম কিংবা হাঁটার জন্য পর্যাপ্ত সময় পান না। এ ক্ষেত্রে উপায় কী? উপায় হলো সাইকেল চালানো। কিছু বছর  আগে শহর কিংবা গ্রাম প্রায় সবখানেই সাইকেল চালানোর চলাচল থাকলেও, বর্তমানে অনেকেই সাইকেল চালানোকে বেছে নিয়েছে শরীর সুস্থ ও ফিট রাখারএকটি অন্যতম মাধ্যম হিসেবে। নিয়মিত সাইকেল চালানো শারীরিক ও মানসিক উভয় স্বাস্থ্যের জন্যই দরকারি।

Aponhut.com এর পক্ষ থেকে আজকের আলোচনায় সাইক্লিং এর বিভিন্ন উপকারীতা ও বিভিন্ন দিক সম্পর্কে জানবো যারা সাইকেল কিনতে আগ্রহী তারা Aponhut.com এর পেইজে গিয়ে পচ্ছন্দ অনুযায়ী সাইকেল কিনতে পারেন।


সাইকেল চালানোর আগে কি কি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত ?


সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক সাইকেল নির্বাচন। সিটের উচ্চতা, হ্যান্ডেলবার, পেডাল, ক্লিটসের অ্যালাইমেন্ট যেন প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরের মাপ অনুযায়ী আরামদায়ক হয়; সাইকেল চালানোর আগে অবশ্যই ওয়ার্মআপ এক্সারসাইজ করে নিতে হবে, যা আমাদের সাইকেল চালানো থেকে সৃষ্ট আঘাত থেকে রক্ষা করবে; আঘাত অথবা অসুস্থতাজনিত কারণে সঠিক ফিটনেসে ফিরে আসতে চাইলে পর্যায়ক্রমে গতি বাড়ানো যেতে পারে; শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো নির্ধারিত লেন ব্যবহার করুন, ট্রাফিক আইন মেনে চলুন; অবশ্যই হেলমেট ব্যবহার করবেন; সম্ভব হলে প্রতিদিন সাইকেল চালানো ভালো, অল্প কিছু সময় হলেও; একটু বিরতি দিন যদি ব্যথা অনুভূত হয় কিংবা মাংসপেশি ফুলে যায় বা অবসন্ন লাগে; যদি আপনি ফিটনেসের জন্য সাইকেল চালান, সপ্তাহে এক দিন সাইকেল চালানো থেকে পুরো বিশ্রাম নিন; যদি কোনো আঘাত থাকে তবে পুরোপুরি সেরে না ওঠা পর্যন্ত সাইকেল চালানো থেকে বিরত থাকবেন; যাঁদের শারীরিক কোনো সমস্যা আছে, তাঁদের বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া সাপেক্ষে সাইকেল চালানো উচিত; ব্যস্ত রাস্তায় অথবা খারাপ আবহাওয়ায় যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে সাইকেল চালাতে হবে। সাইকেল চালানোর আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে তা হলো-


সাইক্লিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় অ্যাক্সেসিরিজ

সাইকেল রাইডের জন্য খোলা হেলমেট ব্যবহার করা

গরমকালে সাইকেল রাইডের সময় সূর্যের আলো থেকে বাঁচতে হালকা বা সাদা রং এর জামা পরিধান করা

রাস্তায় সাইকেল রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় টুলস

এনার্জি ড্রিংক বা এনার্জি পাউডার সাথে রাখতে পারেন

 

রাইডে যাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় কিটস এবং স্ন্যাক্স সাথে রাখতে পারেন সাইকেল চালানো আপনাকে শুধুমাত্র বাহ্যিক ভাবেই ফিট রাখবে না, আভ্যন্তরীণ ভাবেও আপনাকে সুস্থ রাখবে।



সাইক্লিংয়ের উপকারিতা


শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো সুফল অনেক। সাইকেল চালানো মূলত অ্যারোবিক এক্সারসাইজ, যাতে গভীর শ্বাসপ্রশ্বাস, ঘাম ঝরা, হার্টবিট বাড়া ও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেহের কোষকলাকে সুস্থ রাখে।

শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো, মাংসপেশির গঠন ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে; সাইকেল চালালে শরীরে বিপাকের হার বৃদ্ধি পায়, এতে ওজন কমে দ্রুত; উচ্চ রক্তচাপ রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে; হৃদ্‌রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়; রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়িয়ে ক্যানসার, টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে; ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে, খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে ভূমিকা রাখে; মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে; চাপ, হতাশা, অবসাদ ও বিষণ্নতা কমায়; হৃদ্‌যন্ত্রের সহনশীলতা ও শ্বাসযন্ত্রের পেশির শক্তি বাড়ায়; সমন্বয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করে; মাংসপেশির নমনীয়তা ও জয়েন্টের গতিশীলতা উন্নত করে; হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করে; নিয়মিত সাইকেল চালালে মনোযোগ ও সচেতনতা বৃদ্ধি পায়; শরীরের নিম্নাংশের পায়ের মাংসপেশি মজবুত হয়।


মাসল ওয়ার্কআউট


মজবুত পেশি গঠনে সাইকেল চালানোর জুড়ি নেই। নিয়মিত সাইকেল চালানোর ফলে পায়ে পেশির ওপর চাপ পড়ে। ধীরে ধীরে নীতম্ব ও পায়ের পেশি আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। যাদের হাঁটতে সমস্যা হয় তারাও ব্যায়ামের জন্য সাইকেল চালাতে পারেন।


মেদ ঝরাতে


শরীর সুস্থ রাখতে দৈনিক এক ঘণ্টা সাইকেল চালানোর ফলে শরীরের প্রায় ৫০০ ক্যালরি বার্ন হয়। অনেকেই অতিরিক্ত ওজন নিয়ে সমস্যায় ভুগছেন, তারা মেদ ঝরাতে সাইকেল চালাতে পারেন।


নিরাপদ


বেটার হেলথ ম্যাগাজিন থেকে জানা যায়, গবেষণা মতে সাইকেল চালানো অন্যান্য ব্যায়ামের চেয়ে বেশি নিরাপদ। সাইকেল চালানোর ক্ষেত্রে খুব কমই দুর্ঘটনা ঘটে।


ব্যালেন্সিং


দুই চাকার বাহন হওয়ায় সাইকেল পুরোপুরি ব্যালেন্স-নির্ভর। প্রতিদিন চালানোর ফলে শরীরে ব্যালেন্সিং ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে এটি হাই-ফোবিয়া আক্রান্তদের জন্যও কার্যকর।


রোগ প্রতিরোধ


সাইকেল চালানো শুধু পায়ের ব্যায়াম নয়। এটি পুরো শরীরের ব্যায়াম। শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো এতে নিয়মিত ক্যালরি বার্ন হতে থাকে, ফলে শরীরে মেদ জমতে পারে না। এ কারণে ওবেসিটি ও ডায়াবেটিসের মতো সমস্যা দূরে থাকে। চিকিৎসকরা হার্টের সুস্থতার জন্যও সাইকেল চালাতে বলেন।


ঘুমের সমস্যা দূর হয়


সাইকেল চালাতে পরিশ্রম করতে হয়। এতে শরীরে ক্লান্তি আসে। ফলে দিনশেষে ভালো ঘুম হয়। যাদের ঘুমের সমস্যা আছে তারা সাইকেল চালাতে পারেন। অবসাদ কাটাতেও সাইকেল চালানো যেতে পারে।


সময়


ঢাকা শহর মানেই যানজট। বাস বা অন্যান্য গাড়িতে চড়ার কারণে দীর্ঘ সময় যানজটের ফলে নষ্ট হয়ে যায়। সাইকেল আকারে ছোটো বাহন হওয়ায় এতে যানজটের সমস্যা নেই। সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে সাইকেলে চড়ুন। এতে খরচও বাঁচে।


মানসিক চাপমুক্তি


শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো সময় শরীর মুক্ত বাতাসের ছোঁয়া পায়। খোলা পরিবেশে চলাচলের ফলে শুধু শরীরই ভালো থাকে না, পাশাপাশি মানসিক চাপও কমে এবং মস্তিষ্ক পরিষ্কার থাকে।


পরিবেশ রক্ষা


সাইকেল চলে কায়িক শ্রমে। এটি চালাতে কোনো তেল-গ্যাস বা ডিজেল-পেট্রল লাগে না। তাই এর দ্বারা পরিবেশ দূষিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।


 

১।  নিয়মিত সাইকেল চালালে ওজন কমে। সাইকেল চালালে ক্যালোরি খরচ বৃদ্ধি পায় এবং মেটাবলিজম বা বিপাকের হার বৃদ্ধি করে, যার ফলে ওজন কমতে সাহায্য করে।

 

২। সাইকেল চালালে হাইপারটেনশনের রোগীদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

 

৩। শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো ফলে বিশ্রামকালীন হৃদস্পন্দন কমায়। উচ্চ বিশ্রামের হৃদস্পন্দন কারডি ও ভাস্কুলার রোগীদের মৃত্যুহার বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কিত।

 

৪।  সাইকেল চালালে HDL বা ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে LDL বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

 

৫।  নিয়মিত শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালালে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সরকারী কর্মচারীদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ২০ মাইল সাইকেল চালায় তাদের মারাত্মক ও মারাত্মক নয় এমন হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ কমে যায়।

 

৬। শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে যে, স্ট্যাটিক সাইকেল চালনার ব্যায়াম নিয়মিত করলে হার্ট ফেইলিউরের রোগীদের কার্ডিয়াক ফাংশন উন্নত হয়।

 

৭। ডায়াবেটিস কমায়, গবেষণায় পাওয়া গেছে, ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস মেলাইটিসের হার কমে। যাদের ডায়াবেটিস মেলাইটিস আছে তারা নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ করে এবং টাইপ ২ ডাইয়াবেটিস মেলাইটিস এর সূত্রপাতকে প্রতিহত করে।

 

৮। মাংসপেশির গঠনে চমৎকার কাজ করে সাইক্লিং। বিশেষ করে শরীরের নীচের অংশের গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে সাইক্লিং।

 

৯। শরীর সুস্থ রাখতে সাইকেল চালানো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে।

 

১০। মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায় সাইকেল চালানো।

 

১১। ডিপ্রেশন, স্ট্রেস ও অ্যাংজাইটি কমায় নিয়মিত সাইক্লিং।

 

১৩। সমন্বয়ের দক্ষতা বৃদ্ধি করে সাইকেল চালানো।

 

১৪।শ্বাস যন্ত্রের পেশীকে ট্রেইন করে সাইক্লিং।

 

সাইকেল যেমন স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি তেমনি পরিবেশের জন্যও উপকারি। অনেকেই শুধুমাত্র আনন্দের জন্য সাইকেল চালান। এর উপকারিতাগুলো জানার পর আপনার উৎসাহ নিশ্চয়ই আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাইকেল চালানোর অভ্যাস করুন।



তাহলে আর দেরি কেন? এখনি Aponhut.com এর পেইজ  থেকে আপনার পছন্দের সাইকেল কিনে নিন এবং রাস্তায় নিয়ম মেনে সাইক্লিং শুরু করুন।

 

হ্যাপি রাইডিং.....!!!

Community Verified icon