কোরবানির পশুর যত্ন নিবেন যেভাবে

 প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২২, ০৯:৩৫ অপরাহ্ন   |   পোষা প্রাণী ও জীবজন্তু , টিপস ও গাইড

কোরবানির পশুর যত্ন নিবেন যেভাবে
কোরবানির পশুর যত্ন নিবেন যেভাবে- 
মহান আল্লাহ তায়ালা সুরা হজ্জে ইরশাদ করেছেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মাতের জন্য কোরবানির বিধান রেখেছি (সুরা হজ্জ : আয়াত ৩৪) অন্যদিকে সুরা কাওছারে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘সুতরাং তুমি তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করো এবং কোরবানি করো।’(সুরা কাওসার, আয়াত-২)

কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহ পাকের জন্য। নির্ধারিত দিন পশু জবাইয়ের মাধ্যমে পালন করা হয় এই পবিত্র ঈদ-উল-আযহা । কোরবানি ঈদ বা ঈদ-উল-আযহার আর মাত্র কিছুদিন বাকি রয়েছে । এরই মধ্যে কোরবানির পশুর বাজার জমতে শুরু করেছে; আবার অনেকে কোরবানির পশু কিনতেও শুরু করেছে। কেউ কেউ কোরবানির পশু আগেই কিনে নিয়েছেন। কোরবানির এসব পশুর যত্ন নেয়া খুবই জরুরি।

কোরবানির পশুর যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যমে কোরবানি দাতার সঙ্গে কোরবানির পশুর একটি হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়। কোরবানির পশুর প্রতি কোরবানি দাতার ভালোবাসা ও মায়া জন্ম নেয়। সুতরাং কোরবানির পশু হাট বা বাড়ি থেকে কেনার পর  থেকে শুরু করে কোরবানি করার আগ পর্যন্ত নানা ধাপে সেই পশুর যত্ন ও পরিচর্যা নেয়া আবশ্যক। কারণ এ পশুটি মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য তারই নামে উৎসর্গ করা হবে।

কোরবানির পশুর যত্নে যা যা করনীয়- 

কোরবানির পশু কেনার পর যা করতে হবেঃ 
কোরবানির হাট থেকে পশু কেনার পর পশুটিকে দৌড়ে বাড়িতে নেওয়া উচিত নয়। কারণ ওইসব পশুর দৌড়ানোর অভ্যাস নাও থাকতে পারে। এতে গরু বা ছাগলটি ক্লান্ত হয়ে যেতে পারে। হাট থেকে বাড়ির কাছে হলে হেঁটে নেওয়া যেতে পারে অথবা হাট থেকে বাড়ি দূরে হলে পিকআপ ভ্যানে করে পশু নেওয়া যেতে পারে।
 
কোরবানির পশুর খাবার সম্পর্কেঃ 
কোরবানির পশুকে ভালো ও উত্তম খাবার যেমনঃ ভুষি, খৈল, গাছের পাতা, ঘাস ও খড় খাওয়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রস্তুত রাখা এবং খাওয়ানো। যাতে পশুটি কখনও ক্ষুধায় কষ্ট না পায়। কিন্তু জোর করে বেশি খাওয়ানো যাবেনা । পশুর সামনে স্বাভাবিক খাবার রেখে দিতে হবে সে তার সময়মত নিজেই খাবার খেয়ে নিবে। আবহাওয়া গরম থাকলে পশুর খাবার পানির সঙ্গে স্যালাইন মেশানো যেতে পারে। তবে কোরবানির আগের রাতে বেশি খাবার দেওয়া উচিত নয়। 

কোরবানির পশু রাখার জায়গা সম্পর্কেঃ
কোরবানির পশুর শরীর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, পশুটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভালো জায়গায় রাখতে হবে, শান্ত-শীতল পরিবেশে রাখতে হবে। স্যাঁতসেতে, অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা স্থানে রাখা যাবে না। প্রতিদিন পশুর মলমূত্র ও উচ্ছিষ্ট খাবার পরিষ্কারের করে আবার নতুন করে খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।  যাতে কোরবানির পশু রাখার স্থানের পরিবেশ দূষিত না হয়। পরিবেশ দূষিত হলে পশুটি অসুস্থ হয়ে পরতে পারে । 

পশুর প্রতি মায়া-মমতা ও যত্ন দেখানো ইসলামের সুমহান শিক্ষার অন্যতম। আর যে পশু মহান আল্লাহর জন্য উৎসর্গ করার নিয়তে কেনা হয়েছে; তার প্রতি অন্তর থেকে ভালোবাসা ও মমত্ববোধ ইসলামের শিক্ষা। কুরবানির পশুর প্রতি আরও বেশি মমত্ববোধ থাকা জরুরি। পশুর গায়ে হাত বুলিয়ে আদর যত্ন করারও কোরবানি দাতার জন্য সাওয়াবের কাজ। কেননা এ পশুটিকেই মহান আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি লাভের জন্য উৎসর্গ করা হবে। আল্লাহর সামনে নিজের প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করাই উত্তম। কেননা আল্লাহ তায়ালা বান্দার অন্তরের অবস্থা দেখেন।

কোরবানির দিন পশুর প্রতি আপনার করণীয়-

কোরবানির দিন ঈদের জামাআতে যাওয়ার আগে সকাল-সকাল পশুকে গোসল করিয়ে অল্প পরিমান পানি দিয়ে হাল্কা রোদের মধ্যে রাখতে হবে যাতে গোসল করানোর পানি পশুর শরীর থেকে আস্তে আস্তে শুকিয়ে যায়।  

আল্লাহর নামে জবাই করার জন্য পশু শোয়ানোর সময় খুব বেশি ধস্তাধস্তি করা ঠিক নয়। কৌশলে এবং যত্নের সঙ্গে পশুকে শুইয়ে দেওয়া উত্তম। শোয়ানোর পর দেরি না করে দ্রুত জবাই করাও উত্তম।

পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রেও বিশেষ যত্ন জরুরি। পশু যাতে বেশি কষ্ট না পায় সে জন্য ধারালো ছুরি দ্বারা পশু জবাই করা। জবাইয়ের আগেই ছুরি ভালোভাবে ধার/শান দিয়ে নেয়া উত্তম।

কোরবানির পশু জবাইয়ের সময় যতটা সম্ভব পশুর প্রতি সহমর্মী থাকা ও সহজে জবাই করার চেষ্টা করা। এক পশুর সামনে অন্য পশুকে জবাই না করা। এতে জীবিত পশুর মধ্যে আতঙ্ক ও ভয় সৃষ্টি হয়। এতে পশু কষ্ট পায়।

জবাই করার সময় কোরবানির পশুর দেহ থেকে মাথা যেন বিচ্ছিন্ন না হয়। কারণ এটি মাকরূহ। আর এতে পশুকে অপ্রয়োজনীয় কষ্ট দেওয়া হয়।

আরও কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে-  

অনেকেই পশু জবাইয়ের পর পর ই চামড়া ছাড়ানো কিংবা পায়ের রগ কাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটি মোটেও ঠিক নয় বরং জবাইয়ের পর পশু পুরোপুরি নিস্তেজ হয়ে পড়লে কিংবা মৃত্যু নিশ্চিত হলেই কেবল পশুর চামড়া ছাড়াতে হবে। তাড়াহুড়া করে চামড়া ছাড়ানো মারাত্মক নিষ্ঠুরতা। যা কোনোভাবেই উচিত নয়।

সর্বোপরি, কোরবানির পশু কেনা থেকে শুরু করে জবাই পর্যন্ত কোনোভাবেই এ পশুকে কষ্ট না দেওয়া। পশুর প্রতি সদয় ও দয়াবান হওয়া ঈমানের একান্ত দাবি। এ কথাটি মনে রাখা যে- এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আল্লাহর নামে কোরবানি।


এইরকম গুরুত্বপূর্ণ আরও টিপস জানতে এখানে ক্লিক করুন