পিসির জন্য বাংলা কিবোর্ড - বিজয় এবং অভ্র

 প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২৪, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ন   |   শিক্ষা , টিপস ও গাইড

পিসির জন্য বাংলা কিবোর্ড - বিজয় এবং অভ্র

পিসির জন্য বাংলা কিবোর্ড - বিজয় এবং অভ্র

কীবোর্ড শব্দটি ইংরেজি 'keyboard' থেকে উদ্ভূত, যার আক্ষরিক বাংলা অর্থ 'চাবির পাটাতন' হলেও, আমরা সাধারণত এটি কীবোর্ড নামেই চিনি। এটি হলো কম্পিউটারের প্রধান ইনপুট ডিভাইস, যা বিভিন্ন বাটন নিয়ে গঠিত এবং মেকানিক্যাল লিভার বা ইলেকট্রনিক সুইচের মতো কাজ করে। বর্তমান বাজারে বিভিন্ন মডেলের বাংলা কীবোর্ড পাওয়া যায়, তবে এদের দাম বৈচিত্র্যময়। কীবোর্ডের ধরন ও বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে এর দাম নির্ধারিত হয়।


একটি কীবোর্ডে সাধারণত ৮৪ থেকে ১০২টি বাটন থাকে। কীবোর্ড মূলত পাঁচ ধরনের হতে পারে:


  • ১ .ফাংশন কী: বিভিন্ন বিশেষ কার্য সম্পাদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • ২. অ্যারো কী: কার্সর বা নির্দেশক সরানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • ৩. আলফাবেটিক কী: বর্ণমালা টাইপ করার জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • ৪. নিউমেরিক বা লজিক্যাল কী: সংখ্যা ও গাণিতিক ক্রিয়াকলাপের জন্য ব্যবহৃত হয়।

  • ৫. বিশেষ কী: বিভিন্ন নির্দিষ্ট কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেমন: Ctrl, Alt, Shift, ইত্যাদি।


বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য প্রথম ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা কীবোর্ড তৈরি হয় ১৯৮৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর, যা বিজয় কীবোর্ডের প্রথম সংস্করণ ছিল। এই কীবোর্ড বাংলা ভাষার ডিজিটাল লেখার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনে দেয়।


বাংলা লেখার জন্য বর্তমানে দুই ধরনের কীবোর্ড প্রচলিত আছে:

  • ১. বিজয় কীবোর্ড

  • ২. অভ্র কীবোর্ড

বিজয় কীবোর্ড

বিজয় কীবোর্ড হলো বাংলা লেখার প্রথম কীবোর্ড ও সফটওয়্যার যা মোস্তাফা জব্বার উদ্ভাবন করেছেন। এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, ম্যাক ওএস এবং লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমে গ্রাফিক্যাল লেআউট পরিবর্তক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা লেখার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় কীবোর্ডের প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয়, যা বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ছিল।


বিজয় কীবোর্ডের প্রথম সংস্করণটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল এবং অভ্র কীবোর্ড আসার আগ পর্যন্ত এটি ছিল বাংলা লেখার প্রধান মাধ্যম। এই সময়ে, বাংলা ভাষায় কম্পিউটারে লেখালেখি করা একটি চ্যালেঞ্জ ছিল এবং বিজয় কীবোর্ড এই চ্যালেঞ্জকে অতিক্রম করতে সাহায্য করে। প্রথম সংস্করণটি ইউনিকোড ভিত্তিক ছিল, যা বাংলা ভাষার ডিজিটাল লেখার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে।


বিজয় কীবোর্ডের প্রথম সংস্করণের জনপ্রিয়তার পর, ২০১১ সালে এর দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এই সংস্করণটি ইউনিকোডের সম্পূর্ণ প্রচলনের জন্য ডিজাইন করা হয়েছিল। এটি আরও উন্নত ও ব্যবহারবান্ধব হয়ে ওঠে, ফলে বাংলা ভাষার ব্যবহারকারীরা আরও সহজে ও দ্রুততরভাবে তাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারেন। নতুন সংস্করণটি শুধু যে লেখার প্রক্রিয়াকে সহজ করে তা নয়, বরং এটি বাংলা ভাষার ডিজিটাল মাধ্যমের আরও বিস্তৃত প্রচলনেও সহায়ক হয়।


বিজয় কীবোর্ডের এই দীর্ঘ যাত্রা বাংলা ভাষায় প্রযুক্তির ব্যবহারকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এর উদ্ভাবন ও ক্রমাগত উন্নয়ন বাংলা ভাষাভাষীদের জন্য কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইসে বাংলা লেখা সহজ করেছে, যা ভাষার প্রচলন ও প্রসারকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

অভ্র কীবোর্ড

অভ্র কীবোর্ড বাংলা লেখার ক্ষেত্রে এক অনন্য উদ্ভাবন, যা ওমিক্রনল্যাব কর্তৃক বিকশিত হয়েছে। এটি মাইক্রোসফট উইন্ডোজ, ম্যাক ওএস, লিনাক্স, অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেমে ব্যবহার করা যায়। মুক্ত ও উন্মুক্ত উৎসের এই গ্রাফিক্যাল কী-বোর্ড এবং সফটওয়্যারটি প্রথম বিনামূল্যের ইউনিকোড ও এএনএসআই সমর্থিত বাংলা কীবোর্ড ইন্টারফেস হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। অভ্র কীবোর্ড ২৬ মার্চ ২০০৩ সালে মুক্তি পায়। এর উদ্ভাবক মেহদী হাসান খান, যিনি তখন একজন মেডিক্যাল ছাত্র ছিলেন। তাঁর এই উদ্ভাবন বাংলা ভাষাভাষী কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য এক বিশাল প্রাপ্তি ছিল।


অভ্র কীবোর্ড কেবল একটি সাধারণ কীবোর্ড নয়; এর সাথে রয়েছে কিছু অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য যা বাংলা লেখাকে করে তুলেছে আরও সহজ ও কার্যকরী। এর মধ্যে অন্যতম হলো স্বয়ংক্রিয় সংশোধন, যা টাইপ করার সময় সাধারণ ভুলগুলো নিজেই সংশোধন করে। এছাড়াও রয়েছে বানান পরীক্ষক, যা লেখার সময় সঠিক বানান ব্যবহারে সহায়তা করে। অভ্র কীবোর্ডে ডিফল্ট বাংলা ফন্ট নির্ধারণ করতে একটি ফন্ট ফিক্সার সরঞ্জামও রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের লেখার সময় পছন্দমত ফন্ট ব্যবহার করতে দেয়।


অভ্র কীবোর্ডে আরও আছে একটি কীবোর্ড লেআউট সম্পাদক, যা ব্যবহারকারীদের নিজস্ব কীবোর্ড লেআউট তৈরি ও ব্যবহার করার সুযোগ দেয়। এছাড়া, ইউনিকোড থেকে এএনএসআই এবং এএনএসআই থেকে ইউনিকোডে রূপান্তরের সুবিধাও আছে, যা বাংলা ভাষায় লেখার সময় বিভিন্ন ফরম্যাটে রূপান্তরকে সহজ করে তোলে। বাংলা ইউনিকোড ও এএনএসআই ফন্টের একটি বিস্তৃত সেটও অভ্র কীবোর্ডের অংশ, যা ব্যবহারকারীদের নানা ধরনের ফন্ট ব্যবহার করে লেখার স্বাধীনতা দেয়।


অভ্র কীবোর্ডের এই বৈশিষ্ট্যগুলো বাংলা ভাষার ডিজিটাল ব্যবহারকে করেছে আরও সহজ ও প্রবহমান। এটি বাংলা লিপি ব্যবহার করে সব ভাষাতেই টাইপ করার সুবিধা দেয়, যা বাংলা ভাষাভাষী ব্যবহারকারীদের জন্য এক বিশাল সুবিধা। অভ্র কীবোর্ডের উদ্ভাবন বাংলা ভাষায় লেখার ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনে দিয়েছে।


বাংলা ভাষাভাষী কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের জন্য বিজয় ও অভ্র কীবোর্ড উভয়ই একটি বড় সাফল্য। তারা বাংলা লেখার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে, যা বাংলা ভাষার ডিজিটাল ব্যবহারকে করেছে আরও সহজ ও কার্যকরী। এই দুটি কীবোর্ডের উদ্ভাবন বাংলা ভাষার প্রচলন ও প্রসারকে একটি নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে, যা প্রযুক্তির জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহারকে আরও বিস্তৃত করেছে।