ক্যামেরা কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন

 প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২, ০২:০৮ পূর্বাহ্ন   |   ইলেকট্রনিক্স , নিউজ ও রিভিউ

ক্যামেরা কেনার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখবেন
বর্তমান সময়ে বলা যায় প্রতিটি মানুষের স্মার্ট ফোনেই ভালো মানের ক্যামেরা থাকে। কিন্তু তারপরেও অনেকেরই ফটোগ্রাফির শখ থাকে, সেজন্য তারা ডিজিটাল ক্যামেরা কেনার কথা ভাবে। কিন্ত তাদের মধ্যে অনেকেই ডিজিটাল ক্যামেরা সম্পর্কে তেমন বেশি কিছু না জানেনা।
আপনার যদি ফটোগ্রাফির প্রতি আগ্রহ থাকে তাহলে একটি ভালো ডিজিটাল ক্যামেরা কিনতে পারেন। বর্তমানের টেকনোলজি ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে যারা নতুন তাদের জন্য অপার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। প্রথম ক্যামেরা কেনার জন্য যাবতয়ি তথ্য তারা এখানে পেতে পারে। ডিজিটাল ক্যামেরার মাধ্যমে যদি আপনি ভালো ছবি তুলতে চান তাহলে আপনার ক্যামেরার টেকনিক্যাল বিষয় সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকতে হবে। এখন বাজারে অনেক ক্যামেরা রয়েছে, কিন্তু এর ভেতর থেকে ভালো ক্যামেরা বাছাই করাটা সত্যিই অনেক জটিল কাজ। নতুন টেকনোলজি আর নানা অপশনে ভরপুর এই ক্যামেরাগুলো। সব ক্যামেরার কাজ সমান নয়, এবং এগুলোর ভেতরে রয়েছে নানা প্রকারভেদ। এই নির্দেশাবলী আপনাদের নতুন ক্যামেরা খুঁজতে এবং কোন ক্যামেরা আপনার জন্য উপযোগী তার একটি ধারনা দিবে। 
চলুন জেনে নেওয়া যাক কি দেখে ক্যামেরা কিনবেনঃ- 
রেজুল্যুশন (Resolution)
ক্রেতাদের টেন্ডেসী বেশি মেগাপিক্সেলের ক্যামেরার দিকে। আসলে ক্যামেরা প্রস্তুতকারকেরা মেগা পিক্সেল দেখিয়ে মনোযোগ অন্যদিকে ডাইভার্ট করে। যেদিকে আমাদের প্রথম মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন তা হল ক্যামেরার ইমেজ সেন্সরের সাইজ। একটি DSLR ক্যামেরার ইমেজ সেন্সর হয় ৩৬x২৪mm অর্থাৎ ৮৬৮mm2 সার্ফেস এরিয়া থাকে। কম্প্যাক্ট ক্যামেরাগুলোতে সাধারণত ৫x৪mm = ২০ mm2 সার্ফেস এরিয়া পাওয়া যায় মাত্র। এসব কারণেই মেগাপিক্সেল দেখিয়ে ক্যামেরা বিক্রির প্রবণতা বেশী কম্প্যাক্টে। মনে রাখুন ১০-১২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা দিয়ে ভালমতই A3 সাইজের ছবি প্রিন্ট দিতে পারবেন। মেগাপিক্সেল নিয়ে বেশী ভাববার কোন কারণ নেই। সেন্সর CCD ও CMOS দুধরণের হয়। CMOS গুলো বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। CCD পুরনো টেকনোলজি, বেশী ব্যাটারী নেয়, কিছু ভাল ইমেজ দেয় অন্যদিকে CMOS নতুন টেকনোলজি, কম বিদ্যুৎ নেয়। বর্তমানে দুটো সেন্সরের গুনগতপ্রায় সমান হলেও অনেকে CCD কে উপরে রাখেন।
জুম (Zoom)
বেশী জুম দেখে ক্যামেরা কেনার প্রবণতা যারা একটু অভিজ্ঞ তাদের। জুম মূলত দু’ধরণের ১. ডিজিটাল জুম আর ২. অপটিক্যাল জুম। ক্যামেরা কেনার সময় অপটিক্যাল জুম কত তা দেখে কিনুন, ডিজিটার জুম আপনার কোন কাজেই আসবে না। জুম এর জন্য দরকারী হল ইমেজ স্টাব্লাইজার। ইমেজ স্টাব্লাইজার আবার দু ধরণের ১. ডিজিটাল ও ২. অপটিক্যাল। ক্যামেরা কেনার আগে দেখে নিন আপনার ক্যামেরা অপটিক্যাল ইমেজ স্টাব্লাইজিং সাপোর্ট করে কিনা। ডিজিটাল সাপোর্টেড হলে সে ক্যামেরা চয়েস না করাই শ্রেয়।
অ্যাপারচার (Aperture)
অ্যাপারচার হল ক্যামেরার ছিদ্র যা দিয়ে আলো ক্যামেরায় ঢুকে লেন্সে পড়ে। অনেকে ফোকাল লেংথ বলে থাকেন। ক্যামরায় প্রকাশ করা হয় f/1.2-f/22 এভাবে। এটা নির্দেশ করে কত কাছের আর কত দূরের ছবি আপনি ভালভাবে তুলতে পারবেন। DSLR ক্যামেরায় এটা সাধারণত f/1.2-f/22 হয়, মানে দুটো মানের বিশাল পার্থক্য থাকে। কম্প্যাক্ট ক্যামেরাগুলো সাধারণত f/3.3-f/5.5 হয়, অর্থাৎ দুটোর মানের ব্যাবধান কম। দুটোর ব্যাবধান যতবেশী হবে ততবেশী সুবিধা পাবেন আপনি। ক্যামেরা কেনার আগে এটি দেখে নিন।
শাটার স্পিড (Shutter speed)
শাটার স্পিড মানে ক্যামেরার শাটার কত দ্রুত বন্ধ হবে অর্থাৎ, ছিদ্র কতক্ষণ খোলা বা বন্ধ থাকবে সেটা। শাটার যত দ্রুত বন্ধ হবে ক্যামেরার ছিদ্র তত কম সময় খোলা থাকবে; তত কম আলো ক্যামেরায় প্রবেশ করবে; ইমেজ হবে শার্প। অন্যদিকে শাটার আস্তে বন্ধ হলে বেশী সময় খোলা থাকবে; ছবি হবে ঘোলা। বিশেষত চলমান কিছুর ছবি তুলতে শাটার স্পিড প্রয়োজন হবে। শাটার স্পিড ¼,000 এভাবে প্রকাশ করা হয়। ক্যামেরা কেনার আগে দেখে ক্যালকুলেটরে ভাগ করে দেখে নেবেন কোন ক্যামেরার এই মান কম।
অপশন/মুড (Modes)
কম্প্যাক্ট ক্যামেরাগুলোতে ৮০ শতাংশ কাজই অটোমেটিক। তবে কিছু ক্যামেরায় ইউজারদের পার্সোনালাইজ করার সুযোগ থাকে বিভিন্ন মুড ব্যবহার করে। মুড চেঞ্জের অপশনটি শাটারের পাশে চাকতি আকারে হলে কাজে সুবিধা হয়, দ্রুত মুড চেঞ্জ করা যায়। ডিজিটাল উপায়ে মেনু থেকে বাটন চেপে চেপে কাজ করতে অনেকেই সমস্যা বোধ করেন। তাই কেনার আগে আপনার প্রয়োজন অনুসারে মুড বাটন কোথায় তা দেখে নিন। অবশ্য এটা তেমন জরুরী কিছু নয়।
ভিডিও অপশন ( Movie/Video Mood)
বর্তমানে সব ক্যামেরাতেই ভিডিও রেকর্ডিং এর সুবিধা থাকে। 720 p বা 1080p দেখেই অনেকে কিনে ফেলেন, তবে ছবির রেজুলেশনের মতই P এর মূল্য তেমন নেই। 720 p মানে1280x720 রেজুল্যুশনের ভিডিও, 1080p মানে 1920x1080 রেজুল্যুশন। এখন ভিডিও কোয়ালিটিই যদি ভাল না হয় তবে 1280x720 রেজুল্যুশন দিয়ে কি করবেন? ভিডিও এর কোয়ালিটি নির্ভর করে এর ডেটা রেট আর কম্প্রেশন মেথডের উপর। হাই ডাটা রেট আর লো কম্প্রেশন হলে ভিডিও ভাল হবে। এছাড়াও সেন্সরসহ আরো অনেক কিছু নির্ভর করে ভিডিও’র মানের উপর। যতটা পারুন ভাল দেখে নিন, অবশ্য কম্প্যাক্ট ক্যামেরায় খুব ভাল ভিডিও পাবার আশা করবেন না। 1080 p লেখা থাকলেও এর মান কখনোই হ্যান্ডিক্যামের 1080 p হবেনা কারণ সেন্সর দুটো আলাদা।
পরিশেষেঃ-
একটি কথা মনেরাখুন, ভালছবি নির্ভর করে ভাল ক্যামেরাম্যানের উপর, ক্যামেরার উপর না। DSLR হাতে থাকলেই ভাল ছবি উঠে না। কম্প্যাক্ট ক্যামেরা দিয়ে আনায়াসেই আপনি ভালমানের ফটোগ্রাফি করতে পারবেন। সবচেয়ে বেশী নজর রাখুন আলোর দিকে। ফ্লাস এর ব্যবহার যতটা কমকরা সম্ভব তত ভাল। ইন্টারনেট থেকে ফাটোগ্রাফির প্রাথমিক কলাকৌশলগুলো শিখে নিন, এতে ভাল ছবি তোলাটা রপ্ত করতে পারবেন। আর ক্যামেরাকে পানি. ধুলা ও ফাংগাস থেকে রক্ষা করুন ভালমানের কভার ও আদ্রর্তা মেইনটেইন করে।
আশা করি উপরোক্ত টিপসগুলো আপনাদের অনেক উপকারে আসবে। AponHut.com এর মাধ্যমে আপনি ভালো ক্যামেরা কিনতে পারেন।