প্রিন্টার কোনটি ভাল - দাম কত?
বর্তমান সময়ে আমরা এমন একটি যুগে বাস করছি যেখানে ডিজিটাল যোগাযোগ আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। অফিসিয়াল বা ব্যক্তিগত কাজের জন্য, একটি ভালো প্রিন্টারের প্রয়োজনীয়তা এখন আর এড়ানো সম্ভব নয়। গুরুত্বপূর্ণ নথি, ফটো বা স্কুলের অ্যাসাইনমেন্ট প্রিন্ট করার জন্য হাতের কাছে একটি প্রিন্টার থাকা প্রয়োজন। প্রিন্টার কেনার আগে, আপনি কী ধরনের প্রিন্টার কিনবেন, মার্কেটে বর্তমানে কোন প্রিন্টারের কেমন দাম - এই সব প্রশ্ন নিশ্চয়ই আপনার মনে উঁকি দেয়। এই ব্লগে আমরা এই বিষয়গুলো জানার পাশাপাশি প্রিন্টার কেনার সময় কোন কোন বিষয়গুলোর প্রতি আপনার নজর থাকা উচিত সে ব্যাপারেও বিস্তারিত আলোচনা করবো।
তো চলুন এক নজরে আজকের পোষ্টের সূচিপত্র দেখে নেওয়া যাক
১. প্রিন্টার কেনাকাটা
২. কোন ধরণের প্রিন্টার ভাল হবে?
৩. কোন প্রিন্টার দিয়ে কম খরচে প্রিন্ট করা যায়?
৪. প্রিন্টার কিনতে বাজেট কত হওয়া উচিত?
৫. আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখতে হবে?
৬. বাংলাদেশের সেরা প্রিন্টারগুলির মূল্য তালিকা
প্রিন্টার কেনাকাটা
যদিও ডিজাইনের দিক থেকে প্রিন্টারের তেমন কোনো বড় পরিবর্তন দেখা যায়নি, প্রযুক্তিগত দিক থেকে প্রিন্টারগুলি বহুল পরিবর্তিত হয়েছে। মোবাইল প্রিন্টিং অপশন, ওয়্যারলেস সংযোগ, এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) ইত্যাদি আধুনিক প্রযুক্তি প্রিন্টারগুলিকে অনেক বেশি কর্মক্ষম ও কার্যকর করে তুলেছে।
প্রিন্টার কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিবেচনা করা উচিত। প্রথমেই নির্ধারণ করতে হবে আপনার প্রিন্টার কেনার উদ্দেশ্য কী এবং এটি কে ব্যবহার করবে। বাজেটও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা মাথায় রেখে সবচেয়ে ভালো মডেলের প্রিন্টারটি কেনা উচিত।
প্রিন্টারের উদ্দেশ্য নির্ধারণ:
আপনি কি ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য প্রিন্টার কিনছেন, নাকি অফিস বা ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহারের জন্য? ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য সাধারণত অল্প পরিমাণে প্রিন্টিং করতে হয়, তাই ইনকজেট প্রিন্টার ভালো হতে পারে। তবে অফিস বা ব্যবসায়িক কাজে অধিক পরিমাণে প্রিন্টিং প্রয়োজন হলে লেজার প্রিন্টার উপযোগী।
ব্যবহারকারীর ধরন:
প্রিন্টারটি কে ব্যবহার করবে সেটিও বিবেচনা করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি পরিবারের সব সদস্য ব্যবহার করে, তাহলে একটি মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার কিনুন যা প্রিন্টিং, স্ক্যানিং, এবং কপিয়িং করতে পারে। অফিসের জন্য ব্যবহৃত প্রিন্টারগুলো অধিকতর কর্মক্ষম হওয়া উচিত, যা দ্রুত ও উচ্চ গুণগত মানের প্রিন্ট দিতে সক্ষম।
প্রযুক্তিগত সুবিধা:
প্রিন্টারের প্রযুক্তিগত সুবিধাগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক প্রিন্টারগুলোতে মোবাইল প্রিন্টিং, ওয়্যারলেস সংযোগ এবং এনএফসি ফিচার অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা প্রিন্টিং প্রক্রিয়াকে অনেক সহজ করে তোলে। ওয়াই-ফাই সংযুক্ত প্রিন্টারগুলো সহজেই বিভিন্ন ডিভাইস থেকে প্রিন্ট করার সুযোগ দেয়। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি প্রিন্ট করার সুবিধাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মোবাইল প্রিন্টিং:
আধুনিক প্রিন্টারগুলোতে মোবাইল প্রিন্টিং সুবিধা থাকে, যা মোবাইল ডিভাইস থেকে সরাসরি প্রিন্ট করার সুযোগ দেয়। এই সুবিধা কাজে লাগাতে প্রিন্টারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি মোবাইল অ্যাপ থাকা আবশ্যক।
পেপার হ্যান্ডলিং ও প্রিন্ট কোয়ালিটি:
আপনার দৈনিক প্রিন্টিং চাহিদা অনুযায়ী প্রিন্টারের পেপার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বিবেচনা করুন। ছোট পরিসরের কাজের জন্য ১০০-১৫০ পেজ ধারণক্ষম প্রিন্টার যথেষ্ট হতে পারে। কিন্তু বড় অফিসের জন্য ২৫০-১০০০ পেজ ধারণক্ষম প্রিন্টার নির্বাচন করা উচিত। প্রিন্ট কোয়ালিটি নিশ্চিত করতে উন্নত রেজোলিউশনের প্রিন্টার বেছে নিন।
বাজেট:
বাজেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা। আপনার বাজেট অনুযায়ী সবচেয়ে ভালো মডেলের প্রিন্টারটি বেছে নিন। বিভিন্ন দামের প্রিন্টার রয়েছে, তাই প্রয়োজন অনুযায়ী আপনার বাজেট নির্ধারণ করুন।
ডুপ্লেক্সিং ও অন্যান্য সুবিধা:
ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং (টু-সাইডেড প্রিন্টিং) সুবিধা থাকলে কাগজের খরচ কমানো যায়। স্বয়ংক্রিয় ডুপ্লেক্সিং ফিচার থাকলে কাজের গতি বাড়ে। এছাড়া, বড় পেপার ট্রে, এনএফসি পেয়ারিং এবং উচ্চ মেমোরি ক্ষমতাসম্পন্ন প্রিন্টারগুলি আরও কার্যকর হতে পারে।
প্রিন্টার কেনার আগে উপরোক্ত বিষয়গুলো বিবেচনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। প্রয়োজন অনুযায়ী প্রিন্টারের ফিচার ও বাজেট নির্ধারণ করলে আপনি একটি কার্যকর ও সাশ্রয়ী প্রিন্টার বেছে নিতে পারবেন। আধুনিক প্রযুক্তির প্রিন্টারগুলো কাজকে সহজ ও দ্রুত করে তুলছে, তাই সঠিক প্রিন্টার নির্বাচন আপনার প্রিন্টিং অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করবে।
কোন ধরণের প্রিন্টার ভাল হবে?
যে ধরণের প্রিন্টার আপনার প্রয়োজনের সাথে খাপ খায়, তা নির্ভর করে আপনি কেমন প্রিন্টিং করতে চান তার উপর।
যদি আপনাকে একটানা প্রচুর ডকুমেন্ট দ্রুত প্রিন্ট করতে হয়, তাহলে লেজার প্রিন্টার হতে পারে আপনার সেরা পছন্দ। লেজার প্রিন্টারের গুণগত মান অতুলনীয়, বিশেষ করে ডকুমেন্ট প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে। এদের প্রিন্টিং স্পিডও বেশ উচ্চমানের, যা বড় আকারের প্রিন্ট জব সামলাতে সক্ষম। তাছাড়া, লেজার প্রিন্টারের টোনার সহজে শুকিয়ে যায় না, ফলে দীর্ঘ সময় ব্যবহারের উপযোগী।
অন্যদিকে, যদি আপনার প্রধান কাজ ছবি বা উচ্চমানের গ্রাফিক্স প্রিন্ট করা হয়, তাহলে ইঙ্কজেট প্রিন্টার বিবেচনা করা যেতে পারে। ইঙ্কজেট প্রিন্টার নিখুঁতভাবে ছবি প্রিন্ট করতে পারে, যদিও এটি প্রিন্ট করতে কিছুটা বেশি সময় নেয়। এছাড়া, ইঙ্কজেট প্রিন্টারগুলো সাধারণত লেজার প্রিন্টারের চেয়ে সস্তা হয়ে থাকে, যা তাদের জনপ্রিয় করে তুলেছে।
যাদের প্রিন্টিংয়ের কাজ কম এবং মাঝে মাঝে প্রিন্ট করতে হয়, তাদের জন্য লেজার প্রিন্টার ভালো একটি পছন্দ হতে পারে। কারণ লেজার প্রিন্টারের কালি শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা নেই, যা ইঙ্কজেট প্রিন্টারের ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখা যায়। অন্যদিকে, যারা মাঝে মাঝে ছবি প্রিন্ট করতে চান এবং খরচ কম রাখতে চান, তাদের জন্য ইঙ্কজেট প্রিন্টার হতে পারে উপযুক্ত।
সুতরাং, আপনি যদি অধিক পরিমাণে ডকুমেন্ট প্রিন্ট করতে চান তবে লেজার প্রিন্টার এবং যদি ছবি বা গ্রাফিক্স প্রিন্ট করতে চান তবে ইঙ্কজেট প্রিন্টার বেছে নিন।
কোন প্রিন্টার দিয়ে কম খরচে প্রিন্ট করা যায়?
প্রিন্টিংয়ের ক্ষেত্রে খরচ কমানোর প্রধান উপায় হল সঠিক প্রিন্টার বেছে নেওয়া এবং এটি আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজনের সাথে মিলিয়ে নেওয়া।
যদি আপনার প্রচুর ডকুমেন্ট প্রিন্ট করার প্রয়োজন হয়, তাহলে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট লেজার প্রিন্টার সবচেয়ে উপযোগী হতে পারে। এই ধরনের প্রিন্টারগুলি খুব দ্রুত এবং কার্যকরী, ফলে কম সময়ে অধিক সংখ্যক প্রিন্ট করা যায় এবং খরচও অনেক কম হয়। লেজার প্রিন্টারের টোনার কার্টিজ দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রতিটি প্রিন্টের খরচ ইঙ্কজেট প্রিন্টারের তুলনায় অনেক কম হয়।
অন্যদিকে, যদি আপনার রঙিন প্রিন্টের প্রয়োজন হয়, তখন ইঙ্কজেট কালার প্রিন্টার একটি ভালো পছন্দ হতে পারে। ইঙ্কজেট প্রিন্টারগুলির দাম সাধারণত লেজার প্রিন্টারের চেয়ে কম, এবং রঙিন প্রিন্টিংয়ের জন্য এগুলো বেশ কার্যকর। যদিও ইঙ্কজেট প্রিন্টারের কালি দ্রুত শুকিয়ে যায়, তবে সামান্য যত্ন নিলে এটি দীর্ঘ সময় ব্যবহার করা যায়।
আপনি যদি ফটো বা গ্রাফিক্স প্রিন্ট করতে চান, তাহলে বিশেষ ফটো প্রিন্টার বিবেচনা করতে পারেন। ফটো প্রিন্টারগুলি বিশেষভাবে ডিজাইন করা হয়েছে উচ্চমানের ছবি এবং ড্রয়িং প্রিন্ট করার জন্য, যা কম খরচে সেরা ফলাফল দেয়। এই প্রিন্টারগুলির কালি এবং কাগজ উভয়ই ছবি প্রিন্ট করার জন্য আদর্শ, ফলে কম খরচে উচ্চমানের ছবি প্রিন্ট করা সম্ভব হয়।
সুতরাং, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক প্রিন্টার নির্বাচন করে আপনি প্রিন্টিংয়ের খরচ কমিয়ে আনতে পারেন। যদি শুধুমাত্র ডকুমেন্ট প্রিন্টিংয়ের কথা ভাবেন, তাহলে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট লেজার প্রিন্টার সেরা হবে। আর যদি রঙিন প্রিন্ট বা ছবি প্রিন্ট করতে চান, তাহলে ইঙ্কজেট কালার প্রিন্টার বা ফটো প্রিন্টার বেছে নেওয়া উচিৎ।
প্রিন্টার কিনতে বাজেট কত হওয়া উচিত?
প্রিন্টার কেনার ক্ষেত্রে বাজেট নির্ধারণ করা প্রয়োজনের ওপর নির্ভর করে। বিভিন্ন প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন প্রিন্টারের জন্য আলাদা বাজেট বিবেচনা করতে হয়।
যদি আপনার প্রয়োজন একটি অল-ইন-ওয়ান প্রিন্টার হয়, যা স্ক্যান, কপি এবং রঙিন ও কালো প্রিন্ট করতে পারে, তাহলে ৬,০০০ টাকার মধ্যেই এমন একটি প্রিন্টার পেতে পারেন। এই ধরণের প্রিন্টার সকল ধরনের ব্যবহারকারীদের জন্য উপযুক্ত, যাদের বহুমুখী কাজের জন্য একটি প্রিন্টারের প্রয়োজন।
যদি আপনি শুধুমাত্র কালো প্রিন্ট করার জন্য একটি প্রিন্টার খুঁজছেন, তাহলে ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট লেজার প্রিন্টার বিবেচনা করতে পারেন। বাংলাদেশে এই ধরনের প্রিন্টারের দাম প্রায় ৯,৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়। এই প্রিন্টারগুলি ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা দোকানের জন্য আদর্শ, কারণ এগুলো দ্রুত এবং কার্যকরভাবে কাজ সম্পন্ন করতে পারে।
আর যদি বড় অফিসের জন্য একটি উচ্চমানের প্রিন্টার প্রয়োজন হয়, তাহলে বাজেট একটু বেশি হতে হবে। খুব ভাল মানের প্রিন্টারের জন্য কমপক্ষে ২৫,০০০ টাকা খরচ হবে। এমনকি আরো উন্নত এবং কার্যক্ষম প্রিন্টার খুঁজছেন, তাহলে বাজেট আরও বাড়াতে হতে পারে।
অতএব, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী প্রিন্টার কেনার জন্য বাজেট নির্ধারণ করা উচিৎ। ছোটখাটো কাজের জন্য কম দামের প্রিন্টার যথেষ্ট হতে পারে, কিন্তু বড় অফিস বা ব্যবসার জন্য উচ্চমানের এবং উন্নত ফিচারের প্রিন্টার কেনার জন্য বেশি বাজেট নির্ধারণ করতে হবে।
আর কোন গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি দেখতে হবে?
প্রিন্টার কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য বিবেচনা করা অত্যন্ত জরুরি। এই বৈশিষ্ট্যগুলো আপনার প্রিন্টিং অভিজ্ঞতা আরও উন্নত ও কার্যকর করে তুলবে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হলো:
মাল্টি-ফাংশন মডেল
বর্তমান সময়ে শুধুমাত্র প্রিন্ট করার জন্য প্রিন্টার খুবই কম পাওয়া যায়। অধিকাংশ প্রিন্টার এখন মাল্টি-ফাংশন মডেল, যা প্রিন্টিং ছাড়াও স্ক্যানিং ও কপিয়িং করতে সক্ষম। স্ক্যানার সংবলিত প্রিন্টার কেনার মাধ্যমে ডকুমেন্ট কপি করা বা ডিজিটাল ডকুমেন্ট তৈরি করা অনেক সহজ হয়ে যায়। এ ধরণের প্রিন্টার একসাথে প্রিন্ট, স্ক্যান এবং কপি করতে পারার ফলে আপনার কাজ আরও সহজ এবং কার্যকর হবে। আপনি যদি অফিস বা ব্যক্তিগত কাজে বহু উদ্দেশ্য পূরণের জন্য প্রিন্টার খুঁজছেন, তাহলে মাল্টি-ফাংশন প্রিন্টার একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।
কানেক্টিভিটি
প্রিন্টার কেনার সময় কানেক্টিভিটি ফিচারটি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিটি প্রিন্টারই সাধারণত ইউএসবি বা ইথারনেট পোর্টের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে। অফিসে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা প্রিন্টারগুলোর মধ্যে ইথারনেট সংযোগ বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে ওয়াই-ফাই সংযুক্ত প্রিন্টার ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। ওয়াই-ফাই সংযোগের মাধ্যমে আপনি প্রিন্টারটিকে নির্দিষ্ট কোনও তারের সাথে যুক্ত না করেও ব্যবহার করতে পারবেন, যা কাজের গতি ও সুবিধা বাড়িয়ে তোলে। প্রিন্টার কেনার আগে ওয়াই-ফাই ফিচারটি নিশ্চিত করে নেয়া উচিত।
মোবাইল প্রিন্টিং
আধুনিক প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে প্রিন্টারগুলোও মোবাইল ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপনের সুবিধা প্রদান করে। মোবাইলের মাধ্যমে প্রিন্ট করা এখন একটি সাধারণ চাহিদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন প্রিন্টার খুঁজুন যা অ্যান্ড্রয়েড, আইওএস এবং অন্যান্য মোবাইল ডিভাইসের সাথে কাজ করতে পারে। এইচপি'র ইপ্রিন্ট, গুগলের ক্লাউড প্রিন্ট বা অ্যাপেলের এয়ারপ্রিন্টের মতো সেবা ব্যবহার করে ইমেইল বা থার্ড-পার্টি টেকনোলজির মাধ্যমে প্রিন্ট করতে পারবেন। এনএফসি ফিচার থাকলে আপনি মোবাইল ডিভাইসটি প্রিন্টারের সাথে সহজেই পেয়ার করে প্রিন্ট করতে পারবেন। মোবাইল প্রিন্টিং সুবিধা থাকলে আপনার কাজ আরও সহজ এবং দ্রুত সম্পন্ন হবে।
পেপার হ্যান্ডলিং
প্রিন্টারের পেপার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা নির্ধারণ করতে হলে প্রথমেই আপনার দৈনিক প্রয়োজন নির্ধারণ করা উচিত। একটি পার্সোনাল প্রিন্টার সাধারণত ১০০ থেকে ১৫০টি পেজ ধারণ করতে পারে। কিছু প্রিন্টারে ডেডিকেটেড ফটো ট্রে থাকে যা পেপার সোয়াপিং কমিয়ে আনে। বিজনেস প্রিন্টারগুলো সাধারণত ২৫০ থেকে ৫০০ পেজ ধারণ করতে পারে। উন্নত মডেলের প্রিন্টারগুলো ৫০০ থেকে ১০০০ পেজ পর্যন্ত ধারণ করতে পারে। অফিসে ব্যবহারের জন্য মাল্টিপল পেপার ট্রে ওয়ালা প্রিন্টার সবচেয়ে উপযোগী। বড় অফিসে পেপার হ্যান্ডলিং ক্ষমতা বেশি হওয়া অত্যন্ত জরুরি, কেননা এতে কাজের গতি এবং কার্যকারিতা বাড়ে।
ডুপ্লেক্সিং
টু-সাইডেড প্রিন্টিং বা ডুপ্লেক্সিং আপনার পেপার খরচ অর্ধেক কমিয়ে আনতে পারে। কিছু প্রিন্টারে ম্যানুয়াল ডুপ্লেক্সিং সুবিধা থাকে, যা আপনাকে বলে দেয় কিভাবে পেপারটি রোটেট ও রিলোড করতে হবে। স্বয়ংক্রিয় ডুপ্লেক্সিং ফিচার থাকলে কাজটি আরও সহজ হয়ে যায়। এই ফিচারটি বিশেষ করে অফিসে ব্যবহারকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কেননা এটি পেপার খরচ কমানোর পাশাপাশি সময় বাঁচায়।
পেপার সাইজ
সব ধরনের প্রিন্টার দিয়ে এ৩ সাইজের কাগজ প্রিন্ট করা যায় না। তাই প্রিন্টার কেনার আগে ঠিক করে নিন কোন ধরনের প্রিন্টার দিয়ে আপনি কোন সাইজের কাগজ প্রিন্ট করতে চান। এ৪ এবং এ৩ সাইজের মধ্যে পছন্দমত প্রিন্টার নির্বাচন করুন। বড় আকারের কাগজ প্রিন্ট করতে চাইলে এ৩ সাপোর্টেড প্রিন্টার কিনতে হবে, যা সাধারণত ব্যবসায়িক বা ডিজাইন প্রজেক্টে বেশি ব্যবহৃত হয়।
পেপার ট্রে
যদি আপনি একটি হেভি ইউজার হন, তাহলে বড় ট্রে বিশিষ্ট প্রিন্টার নির্বাচন করা উচিত। বড় ট্রে থাকলে একসাথে বেশি পেপার সংরক্ষণ করা যায়, ফলে কাজের ব্যাঘাত কমে যায়। বড় অফিস বা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রায়শই বড় ট্রে বিশিষ্ট প্রিন্টার ব্যবহার করা হয়, যাতে একবারে বেশি পেপার রাখা যায় এবং প্রিন্টিং প্রক্রিয়া বিঘ্নিত না হয়।
মেমোরি
প্রিন্টারের মেমোরি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নির্ভর করে আপনার কাজের ধরন ও পরিমাণের উপর। যদি একসাথে বেশি পরিমাণে প্রিন্ট করতে চান, তাহলে বেশি মেমোরি সম্বলিত প্রিন্টার ব্যবহার করা উচিত। এটি একাধিক প্রিন্ট কমান্ড মেমোরিতে সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, ফলে কাজের গতি বাড়বে। বড় প্রতিষ্ঠান বা অফিসে যেখানে একসাথে অনেক কাজ করা হয়, সেখানে বেশি মেমোরি বিশিষ্ট প্রিন্টার অত্যন্ত উপকারী।
এই বৈশিষ্ট্যগুলি বিবেচনা করে প্রিন্টার কিনলে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক প্রিন্টারটি বেছে নিতে পারবেন।
বাংলাদেশের সেরা প্রিন্টারগুলির মূল্য তালিকা – জুলাই ২০২৪
বাংলাদেশে প্রিন্টারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে, এবং বিভিন্ন ব্র্যান্ড ও মডেলের প্রিন্টার ব্যবহারকারীদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করছে। বিডি স্টলের প্রিন্টার ক্রেতাদের আগ্রহের ভিত্তিতে আমরা জুলাই ২০২৪ এর সেরা প্রিন্টারগুলির একটি তালিকা তৈরি করেছি। এই তালিকায় বিভিন্ন ধরণের প্রিন্টার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা বিভিন্ন কাজের জন্য উপযোগী। আসুন দেখে নেওয়া যাক বর্তমান সময়ে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকরী প্রিন্টারগুলি এবং তাদের মূল্য:
১. HP LaserJet M211dw Single Function Laser Printer
মূল্য: ৳ ২৪,০০০
বিবরণ: এই লেজার প্রিন্টারটি একক কার্যক্ষমতা সম্পন্ন, যা উচ্চ মানের প্রিন্ট আউট দিতে সক্ষম। অফিস এবং ছোট ব্যবসার জন্য এটি একটি আদর্শ প্রিন্টার।
২. HP LaserJet Pro 4001DN Printer
মূল্য: ৳ ২২,৮০০
বিবরণ: এই প্রিন্টারটি ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং ফিচার সহ আসে, যা দ্বিপাক্ষিক প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে কাগজের ব্যবহার কমায় এবং খরচ সাশ্রয় করে। এটি বড় অফিসের জন্য খুবই কার্যকরী।
৩. HP Laser MFP 135W Multifunction Mono Laser Printer
মূল্য: ৳ ২২,৫০০
বিবরণ: এই প্রিন্টারটি প্রিন্টিং, স্ক্যানিং এবং কপিয়িং এর সমন্বয়ে মাল্টিফাংশনাল সুবিধা প্রদান করে। ছোট অফিস বা বাসার জন্য এটি একটি উপযুক্ত মডেল।
৪ . Epson EcoTank L4260 Wi-Fi Duplex Printer
মূল্য: ৳ ৩২,৮০০
বিবরণ: ইকোট্যাঙ্ক প্রযুক্তি সহ এই প্রিন্টারটি দীর্ঘমেয়াদে কালি খরচ সাশ্রয় করে। ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং ও ওয়াই-ফাই সুবিধা থাকায় এটি অত্যন্ত সুবিধাজনক।
৫ . Canon LBP 6230dn imageCLASS A4 Black Laser Printer
মূল্য: ৳ ৩৮,৩০০
বিবরণ: ক্যাননের এই প্রিন্টারটি দ্রুত এবং উচ্চ মানের প্রিন্টিং সক্ষমতা প্রদান করে। এটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী।
৫ . Instant Handheld Mini Printer
মূল্য: ৳ ১,৮৯৯
বিবরণ: এটি একটি পোর্টেবল মিনি প্রিন্টার যা সহজেই হাতের মুঠোয় রাখা যায়। ছোট ও দ্রুত প্রিন্টিং কাজের জন্য এটি আদর্শ।
৭ . Pantum P3010DW Single Function Printer
মূল্য: ৳ ১৬,৫০০
বিবরণ: প্যান্টামের এই প্রিন্টারটি একক কার্যক্ষমতা সম্পন্ন এবং দ্রুত প্রিন্টিং সক্ষম। এর ওয়াই-ফাই সংযোগ সুবিধা প্রিন্টিংকে আরও সহজ করে তোলে।
৮ . Epson EcoTank L11050 A3 Wi-Fi Ink Tank Printer
মূল্য: ৳ ৫৩,০০০
বিবরণ: এই প্রিন্টারটি A3 সাইজের প্রিন্ট করতে সক্ষম এবং ইনক ট্যাঙ্ক প্রযুক্তি সহ দীর্ঘমেয়াদে কালি সাশ্রয় করে। গ্রাফিক্স ও ডিজাইন কাজের জন্য এটি একটি উপযুক্ত প্রিন্টার।
৯ . Canon LBP3300 Monochrome Laser Printer
মূল্য: ৳ ৯,০০০
বিবরণ: এই মনোক্রোম লেজার প্রিন্টারটি সহজ এবং কার্যকরী। ছোট অফিস বা ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য এটি একটি ভাল পছন্দ।
১০ . Brother DCP-T820DW Wireless Duplex Printer
মূল্য: ৳ ৩০,৫০০
বিবরণ: এই ব্রাদার প্রিন্টারটি ওয়্যারলেস সংযোগ এবং ডুপ্লেক্স প্রিন্টিং সুবিধা প্রদান করে। বড় পরিসরের প্রিন্টিং কাজের জন্য এটি বিশেষভাবে কার্যকর।
এই প্রিন্টারগুলির মধ্যে বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও সুবিধা রয়েছে, যা আপনার প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী উপযুক্ত হতে পারে। সঠিক প্রিন্টার নির্বাচন করার আগে প্রতিটি মডেলের বৈশিষ্ট্য এবং মূল্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।