WiFi স্পিড বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায় – ২০২৫ গাইড

 প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৫, ০৪:৩৬ অপরাহ্ন   |   ইলেকট্রনিক্স , টিপস ও গাইড

WiFi স্পিড বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায় – ২০২৫ গাইড

পরিচিতি: ধীর WiFi – আমাদের নিত্যদিনের ঝামেলা

সত্যিকার অর্থে wifi কি কিভাবে কাজ করে এই বিষয় সম্পর্কে আপনাদেরকে জানাবো এবং এটা কেন স্লো হয়ে যায়। ইন্টারনেট ছাড়া আজকের দিনে কিছুই চলে না। পড়াশোনা, অফিসের কাজ, অনলাইন ক্লাস, বিনোদন—সবকিছুই WiFi নির্ভর। কিন্তু মাঝে মাঝে WiFi এত ধীরগতির হয়ে পড়ে যে কাজ করা অসম্ভব হয়ে যায়। পেজ লোড হয় না, ভিডিও বাফার করে, আর Zoom মিটিংয়ে সাউন্ড কেটে যায়। এমন পরিস্থিতি আমাদের প্রায় সবারই পরিচিত। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে আগে বুঝতে হবে কী কারণে WiFi ধীর হয় এবং কিভাবে সেটি সমাধান করা যায়। আমি নিজেও এই সমস্যায় পড়ে অনেক গবেষণা করেছি, এবং বেশ কিছু কার্যকরী সমাধান পেয়েছি। আজকের এই গাইডে আমি শেয়ার করবো ২০২৫ সালের জন্য WiFi স্পিড বাড়ানোর ১০টি কার্যকরী উপায়, যেগুলো সহজেই বাসায় বসেই আপনি প্রয়োগ করতে পারবেন।

রাউটারটি ভালো অবস্থানে রাখুন

WiFi সিগনাল দেয়াল, লোহা, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ইত্যাদির কারণে দুর্বল হয়ে যেতে পারে। তাই রাউটার কোথায় রাখা হচ্ছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই রাউটার ঘরের এক কোণায় রেখে দেয়, যেখানে সিগনাল অনেকটা ব্লক হয়ে যায়। আমি যখন রাউটারটি ঘরের মাঝখানে উঁচু স্থানে রাখি, তখন পুরো বাসায় ভালো কভারেজ পাই। রাউটার রাখার জায়গা ঠিক না হলে আপনি যত ভালো ইন্টারনেট কিনুন না কেন, কাঙ্ক্ষিত স্পিড পাবেন না। চেষ্টা করুন রাউটারটি এমন জায়গায় রাখতে, যেখান থেকে পুরো ঘরে সহজে সিগনাল ছড়িয়ে পড়ে। দেয়াল, কাঠ বা ধাতব বস্তু থেকে দূরে রাখলে সিগনাল অনেকটাই শক্তিশালী হয়।

রাউটারের ফার্মওয়্যার আপডেট করুন

প্রযুক্তি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। রাউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত তাদের ফার্মওয়্যার আপডেট করে, যাতে নতুন ফিচার ও বাগ ফিক্স অন্তর্ভুক্ত থাকে। কিন্তু আমরা অনেকেই বছরের পর বছর পুরনো সফটওয়্যারেই চালাই রাউটার। এতে WiFi ধীরে হয়ে যায়, এমনকি মাঝে মাঝে হ্যাংও হতে পারে। আমি একবার রাউটারের ফার্মওয়্যার আপডেট করার পরই লক্ষ্য করলাম যে ডাউনলোড স্পিড অনেক বেড়েছে। রাউটারের Admin Panel-এ ঢুকে Firmware Update অপশন খুঁজে আপডেট দেওয়া যায়। ফার্মওয়্যার আপডেট করলে শুধু স্পিড নয়, নিরাপত্তাও বাড়ে। তাই WiFi ধীর হলে ফার্মওয়্যার চেক করাটা অপরিহার্য।

অতিরিক্ত ডিভাইস সংযোগ বন্ধ করুন

WiFi একসাথে বেশি ডিভাইস সংযুক্ত থাকলে প্রতিটি ডিভাইসে স্পিড কমে যায়। অনেক সময় আমরা জানিই না, কতগুলো ফোন, ট্যাব, ল্যাপটপ কানেক্টেড আছে। আমার বাসায় একদিন দেখি, রাউটারে আটটি ডিভাইস সংযুক্ত—তাই নেট ছিল একদমই স্লো। তখন কিছু ডিভাইস ডিসকানেক্ট করে দেই, এবং স্পিড আবার আগের মতো হয়ে যায়। রাউটারের লগইনে গিয়ে Connected Devices চেক করুন, এবং যেগুলো প্রয়োজন নেই, সেগুলো Remove করুন। প্রয়োজনে গেস্ট মোড চালু করে বন্ধু বা অতিথিদের আলাদা নেটওয়ার্ক দিন। এতে মূল WiFi-র উপর চাপ কমে।

WiFi চ্যানেল পরিবর্তন করুন

WiFi একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে কাজ করে। কিন্তু যদি আশেপাশে অনেক রাউটার একই চ্যানেল ব্যবহার করে, তাহলে সিগনাল ক্ল্যাশ করে এবং স্পিড কমে যায়। বিশেষ করে ফ্ল্যাটে একাধিক WiFi থাকলে এটা হয়েই থাকে। আমি WiFi Analyzer অ্যাপ দিয়ে দেখে নিই কোন চ্যানেল ফাঁকা, এরপর রাউটারে লগইন করে চ্যানেল সেটিংস থেকে সেটি পরিবর্তন করি। অনেক সময় শুধু চ্যানেল বদলেই স্পিড দ্বিগুণ বেড়ে যায়। আপনার রাউটার 2.4GHz হলে চ্যানেল ১, ৬ বা ১১ বেছে নিতে পারেন। আর 5GHz হলে 36, 40, 44 বা 48 ভালো অপশন।

আধুনিক রাউটার ব্যবহার করুন

পুরনো প্রযুক্তির রাউটার দিয়ে ২০২৫ সালের গতি আশা করা যাবে না। আজকাল অনেক রাউটার আছে যারা MU-MIMO, Beamforming, এবং WiFi 6 সাপোর্ট করে। আমি নিজে TP-Link Archer C6 ব্যবহার করি, যার পারফরম্যান্স অসাধারণ। এর মাধ্যমে একাধিক ডিভাইসেও স্পিড বজায় থাকে। আপনি যদি এখনও পুরনো 2012 বা 2015 সালের রাউটার ব্যবহার করেন, তাহলে এখনই নতুন একটি রাউটারে বিনিয়োগ করা উচিত। সাশ্রয়ী দামে Xiaomi, Tenda, D-Link, TP-Link ব্র্যান্ডের অনেক ভালো মডেল বাজারে রয়েছে।

রাউটার রিস্টার্ট করুন

একটানা অনেকদিন রাউটার চালু থাকলে তা ধীরে হয়ে যায়। কারণ, তখন RAM ফাঁকা থাকে না, গরম হয়ে যায়, আর প্রসেসর স্লো কাজ করে। এই সমস্যার সহজ সমাধান হলো, সপ্তাহে অন্তত একবার রাউটার রিস্টার্ট করা। আমি ব্যক্তিগতভাবে শুক্রবার রাউটার বন্ধ করে ৩০ সেকেন্ড পরে আবার চালু করি। এতে পারফরম্যান্স অনেকটাই ঠিক থাকে। যদি রাউটার Timer সাপোর্ট করে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ে Restart Schedule সেট করে দিন। এটি সহজ হলেও খুব কার্যকর একটি উপায়।

Bandwidth Limit ঠিক করুন

একসাথে অনেক ডিভাইস WiFi ব্যবহার করলে সবাই সমান স্পিড পাবে না। কেউ বেশি ভিডিও দেখলে অন্যদের গতি কমে যাবে। আমি QoS বা Bandwidth Control চালু করে সেটি ঠিক করেছি। আপনি চাইলে নির্দিষ্ট ডিভাইসের জন্য নির্দিষ্ট স্পিড বরাদ্দ করতে পারেন। এতে করে অফিসের কাজ, অনলাইন ক্লাস এবং বিনোদনের জন্য আলাদা ব্যান্ডউইথ নির্ধারণ করা যায়। রাউটারে QoS সেটিংসে গিয়ে এটি সহজেই কনফিগার করা যায়। বিশেষ করে বাসা বা অফিসে বহু লোক WiFi ব্যবহার করলে এই টিপসটি খুবই দরকারি।

WiFi Extender বা Repeater ব্যবহার করুন

বড় বাসা হলে WiFi সিগনাল পুরো ঘরে পৌঁছায় না। এতে করে আপনি কোনো ঘরে ভালো নেট পান, আবার অন্য ঘরে নেট থাকে না। এই সমস্যার সমাধান হলো WiFi Extender বা Repeater। আমি Xiaomi WiFi Repeater Pro ব্যবহার করি, যা মূল রাউটারের সিগনাল কপি করে দুর্বল এলাকায় পৌঁছে দেয়। এতে সেই ঘরেও ভালো স্পিড পাওয়া যায়। TP-Link, Xiaomi, Netgear-এর অনেক ভালো Repeater বাজারে আছে, যেগুলো সহজেই ইনস্টল করা যায়। যারা দোতলা বা বড় ফ্ল্যাটে থাকেন, তাদের জন্য এটি খুব উপকারী।

ডিভাইসের ক্যাশ ক্লিয়ার করুন

WiFi ধীর মনে হলেও আসলে ফোন বা ল্যাপটপ স্লো থাকলে সমস্যা হয়। ফোনে বেশি অ্যাপ, জমা ক্যাশ বা ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা ইন্টারনেট স্পিড কমিয়ে ফেলে। আমি নিয়মিত Files by Google অ্যাপ ব্যবহার করে ক্যাশ ক্লিয়ার করি। কম্পিউটারে Disk Cleanup বা CCleaner ব্যবহার করলে একই ফল পাওয়া যায়। ব্রাউজারের হিস্টোরি, অ্যাড-অন ইত্যাদি ক্লিয়ার করলে ইন্টারনেট পারফরম্যান্স ভালো হয়। তাই শুধু রাউটার নয়, আপনার ডিভাইসটাকেও পরিষ্কার রাখুন।

নিরাপদ পাসওয়ার্ড দিন

WiFi পাসওয়ার্ড যদি সহজ হয়, তাহলে আশেপাশের লোকজন সহজেই কানেক্ট করতে পারে। এতে করে আপনার ইন্টারনেট স্পিড কমে যায়। আমি আগে সহজ পাসওয়ার্ড রাখতাম, যেমন “12345678”। একবার দেখি অচেনা ৭টি ডিভাইস কানেক্টেড! পরে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দিয়ে এবং WPA2 এনক্রিপশন ব্যবহার করে আমি এটি নিরাপদ করি। এখন প্রতি তিন মাসে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করি এবং WPS ফিচার বন্ধ রাখি। নিরাপত্তা ঠিক রাখলে আপনার স্পিডও ঠিক থাকবে।

FAQs: আপনার প্রশ্ন, আমার উত্তর

WiFi ধীর হয়ে গেলে প্রথমে কী করব?

রাউটার রিস্টার্ট করুন, Connected Devices চেক করুন এবং রাউটারের অবস্থান পরিবর্তন করুন। এর পরেও সমস্যা থাকলে চ্যানেল ও ফার্মওয়্যার আপডেট করুন।

WiFi চ্যানেল কিভাবে পরিবর্তন করব?

WiFi Analyzer অ্যাপ ডাউনলোড করে দেখুন কোন চ্যানেল ফাঁকা। এরপর রাউটারে লগইন করে Wireless Settings-এ গিয়ে চ্যানেল পরিবর্তন করুন।

ভালো রাউটার কীভাবে চিনবো?

WiFi 5 বা WiFi 6 সাপোর্ট করে এমন ডুয়াল ব্যান্ড রাউটার কিনুন। TP-Link, Xiaomi, Tenda ভালো ব্র্যান্ড।

WiFi Repeater কতটুকু কাজ করে?

Repeater মূল রাউটারের সিগনাল বাড়িয়ে দেয়। এটি দুর্বল এলাকায় ইন্টারনেট পৌঁছাতে সাহায্য করে।

মোবাইলের ক্যাশ ক্লিয়ার করলে স্পিড বাড়ে?

হ্যাঁ, ক্যাশ ও অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ ডেটা ক্লিয়ার করলে ইন্টারনেট পারফরম্যান্স উন্নত হয়।

উপসংহার

আমি নিজে এসব টিপস ব্যবহার করে WiFi স্পিড অনেকটাই বাড়াতে পেরেছি। যদি আপনি প্রতিদিন WiFi ধীরগতির সমস্যায় ভোগেন, তাহলে এখনই উপরোক্ত ১০টি পদ্ধতি অনুসরণ করুন। অল্প খরচে ও সহজ উপায়ে আপনার ইন্টারনেট হবে আগের চেয়ে অনেক দ্রুত ও স্থিতিশীল।