৫০০০ টাকার মধ্যে ভালো ল্যাপটপ

৫০০০ টাকার মধ্যে ভালো ল্যাপটপ
৫০০০ টাকায় ল্যাপটপ – সম্ভব কি?
প্রথমেই বলি, ৫০০০ টাকায় ল্যাপটপ পাওয়া অসম্ভব নয়, তবে নতুন ল্যাপটপ এই দামে পাওয়ার আশা রাখা উচিত নয়। এই বাজেটে আপনি সাধারণত পাবেন সেকেন্ড হ্যান্ড বা রিফারবিশড ল্যাপটপ, যেগুলো আগে ব্যবহার করা হয়েছে বা সার্ভিসিং করে পুনরায় বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারণ ব্রাউজিং, অনলাইন ক্লাস, অফিস ওয়ার্ড কাজের জন্য এই বাজেটের ল্যাপটপ যথেষ্ট হতে পারে।
আমাদের দেশের অনেক শিক্ষার্থী কিংবা নতুন চাকরিপ্রত্যাশী যারা মাত্র শুরু করছেন, তাদের বাজেট সাধারণত সীমিত থাকে। এই বাজেটে নতুন ল্যাপটপ কেনা একেবারেই অসম্ভব, কারণ নতুন ল্যাপটপের প্রাথমিক দামই ২৫,০০০ টাকার উপরে। তাই সেকেন্ড হ্যান্ড বা রিফারবিশড ল্যাপটপই একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, আমি প্রথম যখন চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন এক বন্ধুর মাধ্যমে ৪,৮০০ টাকায় একটি Dell ল্যাপটপ কিনেছিলাম। যদিও সেটি দেখতে পুরনো ছিল, কিন্তু মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, ব্রাউজিং, এবং ভিডিও লেকচার দেখার কাজ ঠিকই করতে পারতাম। এত কম বাজেটেও প্রযুক্তির জগতে প্রবেশ করার সুযোগ পেয়েছিলাম।
অনেকেই ভাবেন এত কম দামের ল্যাপটপে কিছুই করা যাবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, কাজের ধরন বুঝে আপনি সিদ্ধান্ত নিলে এই বাজেটেও কাজ চালানো সম্ভব। শিক্ষার্থী, কনটেন্ট রাইটার, ব্লগার, কিংবা ছোটখাটো ব্যবসায়ী – এদের জন্য এই ল্যাপটপগুলো সঠিক ব্যবহার করলে ভালো সাপোর্ট দিতে পারে। তবে অবশ্যই সীমাবদ্ধতা মাথায় রেখে কিনতে হবে।
এত কম দামে কীভাবে ল্যাপটপ পাওয়া যায়?
অনেক কর্পোরেট অফিস বা ব্যক্তি পুরাতন ল্যাপটপ বিক্রি করেন, যেগুলো এখনও ভালোভাবে কাজ করে। মার্কেটপ্লেস, সেকেন্ড হ্যান্ড দোকান এবং কিছু নির্দিষ্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এই ল্যাপটপগুলো সস্তায় পাওয়া যায়।
ব্যবহৃত ও রিফারবিশড ল্যাপটপের ভিন্নতা
ব্যবহৃত ল্যাপটপ মানে হলো কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত পুরাতন ডিভাইস। অন্যদিকে রিফারবিশড ল্যাপটপ মানে, কোনো ত্রুটি মেরামত করে নতুনের মতো করে বিক্রির উপযোগী করে তোলা হয়েছে। রিফারবিশড ল্যাপটপে সাধারণত কিছু ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি দেওয়া হয়।
কোন কোন ব্র্যান্ডের ল্যাপটপ ৫০০০ টাকায় পাওয়া যায়?
এই বাজেটে বেশিরভাগ সময় পুরাতন মডেলের Dell, HP, Lenovo এবং Acer ল্যাপটপ পাওয়া যায়। এগুলো সাধারণত ২০১০–২০১৫ সালের মডেল, তবে এখনো সাধারণ কাজের জন্য যথেষ্ট।
যখন আপনি মাত্র ৫০০০ টাকার বাজেট নিয়ে ল্যাপটপ কেনার কথা ভাবছেন, তখন বাজারে নতুন কিছু পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে পুরনো বা ব্যবহৃত ল্যাপটপের বাজারে কিছু নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড সবসময় এগিয়ে থাকে। এই দামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় Dell, HP, Lenovo এবং মাঝে মাঝে Acer-এর পুরনো ভার্সনের ল্যাপটপ।
আমরা অনেক সময় ভাবি যে পুরনো মডেল মানেই একদম ব্যবহার অনুপযোগী, কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ আলাদা। উদাহরণস্বরূপ, Dell-এর Latitude সিরিজ, HP-এর Elitebook সিরিজ বা Lenovo-এর ThinkPad সিরিজ এমন কিছু মডেল যেগুলো ২০১২-২০১৫ সালের হলেও এখনও শক্তিশালী এবং স্থায়িত্বে বিশ্বস্ত। এই ব্র্যান্ডগুলো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে ব্যবহৃত হয়, তাই এদের ব্যবহৃত সংস্করণগুলো বাজারে সেকেন্ড হ্যান্ড হিসেবে পাওয়া যায়।
এইসব ল্যাপটপ সাধারণত রিফারবিশড অবস্থায় আসে, এবং প্রায়শই নতুন করে Windows সেটআপ, নতুন কীবোর্ড কভার বা ব্যাটারি রিপ্লেস করা থাকে। তাই এই বাজেটে নতুন ল্যাপটপ না পেলেও, নামকরা ব্র্যান্ডের নির্ভরযোগ্য ল্যাপটপ পাওয়া সম্ভব হয়। তবে অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে যেন প্রতারিত না হন।
Dell, HP, Lenovo – পুরাতন ভার্সনের দাম
২০১২ সালের Dell Latitude, HP Elitebook, কিংবা Lenovo ThinkPad সিরিজের কিছু মডেল আপনি ৪৫০০–৫৫০০ টাকার মধ্যে পেতে পারেন, যদি ব্যাটারি বা চার্জার আগেই ভালো অবস্থায় থাকে।
কোথায় পাবেন এমন সস্তা ল্যাপটপ?
সস্তা ল্যাপটপ কোথায় পাব – এ প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো, আপনি অনলাইন এবং অফলাইন উভয় মার্কেটেই এই ধরণের ল্যাপটপ খুঁজে পেতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে নির্ভরযোগ্যতা ও রিভিউয়ের দিকে।
বাংলাদেশে যেকোনো ইলেকট্রনিক্স কেনার জন্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য স্থান হলো ঢাকা। বিশেষ করে কম দামের ল্যাপটপ খুঁজতে গেলে ঢাকার কিছু নির্দিষ্ট মার্কেট অনেক বিখ্যাত – যেমন IDB ভবন, Elephant Road এর কম্পিউটার মার্কেট, ও নিউমার্কেট সংলগ্ন কিছু দোকান।
এই জায়গাগুলোর দোকানিরা সাধারণত পুরনো অফিস থেকে বা আমদানি করা পুরনো ল্যাপটপ বিক্রি করে থাকেন। আপনি চাইলে সেখানে গিয়ে নিজ হাতে দেখে শুনে, দরদাম করে কিনতে পারবেন। তবে অনেক সময় সেগুলো একেবারে গ্যারান্টি ছাড়া দেওয়া হয় – তাই যাচাই-বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নিন।
অন্যদিকে যারা ঢাকায় যেতে পারেন না, তারা অনলাইন মার্কেটপ্লেস গুলো থেকে সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনতে পারেন। Facebook Marketplace, কিংবা Aponhut - এগুলোর মধ্যে Aponhut অনেক বেশি নিরাপদ কারণ তারা পণ্য যাচাই করে বিক্রি করে। বিক্রেতার রেটিং, মন্তব্য ও ছবি দেখে সহজেই যাচাই করে নেওয়া যায়। তবে অনলাইন কিনলে সম্ভব হলে কুরিয়ার নয়, হ্যান্ড-টু-হ্যান্ড ডেলিভারি বেছে নিন।
ঢাকার কম্পিউটার মার্কেট
ঢাকার IDB ভবন, Elephant Road, এবং যাত্রাবাড়ি কম্পিউটার মার্কেট এমন কিছু জায়গা যেখানে আপনি সস্তায় সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ পেতে পারেন। দাম হাগল করাও এখানে একটি বড় সুবিধা।
অনলাইন মার্কেটপ্লেস (Aponhut & Facebook)
Facebook Marketplace, এবং Aponhut-এর মতো সাইটে লোকজন তাদের ব্যবহৃত ল্যাপটপ বিক্রি করে। এইসব প্ল্যাটফর্মে দাম তুলনামূলকভাবে কম হয় এবং আপনি নিজের এলাকার মধ্যে বিক্রেতাও পেতে পারেন।
সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কেনার আগে যা যা খেয়াল রাখবেন
ল্যাপটপ কিনতে করণীয় বিষয়গুলো জানা অত্যন্ত জরুরি। সেকেন্ড হ্যান্ড কিনতে গেলে নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই পরীক্ষা করুন:
সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কেনার সময় যত কম দামেই কেনেন না কেন, কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই যাচাই করা দরকার। প্রথমত, ল্যাপটপের প্রসেসর কত পুরনো? আজকাল কমপক্ষে Intel Core i3 Second Gen হলেই বেশিরভাগ সাধারণ কাজ করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে Dual Core হলেও সমস্যা নেই, তবে ব্রাউজিংয়ে ধীরগতি হতে পারে।
এরপর RAM ও স্টোরেজ চেক করতে হবে। যদি 2GB RAM থাকে তবে Chrome বা Zoom চালানো কিছুটা স্লো হতে পারে। তাই চেষ্টা করুন কমপক্ষে 4GB RAM ও 250–320GB HDD থাকলে ভালো হয়।
ব্যাটারি ও চার্জার খুব গুরুত্বপূর্ণ। বেশিরভাগ পুরনো ল্যাপটপের ব্যাটারি অল্প সময় চলে। সেক্ষেত্রে চার্জার ঠিকমতো কাজ করছে কি না এবং নতুন ব্যাটারি কত দামে পাওয়া যাবে তা জেনে নেওয়া ভালো।
সবশেষে, স্ক্রিনে ডেড পিক্সেল আছে কি না, কীবোর্ড সব কি ঠিকঠাক চলছে কি না, USB ও WiFi কাজ করছে কিনা – সবগুলো হাতে কলমে পরীক্ষা করে নিন। না বুঝলে একজন পরিচিত টেকি বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে যান।
প্রসেসর ও র্যামের অবস্থা
কমপক্ষে Intel Core i3 2nd Gen বা Dual Core প্রসেসর হলেই ভালো। র্যাম কমপক্ষে 2GB হলে ব্রাউজিং বা টাইপিং চালানো সম্ভব হয়।
ব্যাটারি লাইফ ও চার্জিং সিস্টেম
ব্যাটারি ১ ঘন্টা চালানো সম্ভব কিনা দেখে নিতে হবে। চার্জার কাজ করছে কি না, তা নিশ্চিত করুন। নতুন ব্যাটারি কিনতে হলে ১০০০–১৫০০ টাকা অতিরিক্ত খরচ হতে পারে।
স্ক্রিন ও কিবোর্ড পরীক্ষা
স্ক্রিনে লাইন, ডেড পিক্সেল আছে কিনা, এবং কিবোর্ডে সব কী কাজ করছে কিনা – এগুলো দেখে নিশ্চিত হতে হবে। কিবোর্ড রিপ্লেস করতে হলে ৪০০–৭০০ টাকা খরচ পড়তে পারে।
কিভাবে যাচাই করবেন ল্যাপটপ আসল নাকি জাল?
কিছু সময় ল্যাপটপের ওপর স্টিকার বা মডেল ভুয়া হতে পারে। তাই যাচাই করার জন্য:
ল্যাপটপের গায়ে লোগো দেখেই যদি আপনি ভাবেন ‘আসল’ তাহলে ভুল করবেন। অনেক সময় পুরনো কেসিংয়ে ভুয়া মাদারবোর্ড বা কম স্পেকসের অংশ বসিয়ে দেওয়া হয়। তাই যাচাই করতে হলে শুধু বাইরের রূপ নয়, ভেতরের তথ্যও দেখতে হবে।
প্রথমে BIOS-এ গিয়ে দেখে নিন মডেল ও সিরিয়াল নাম্বার কি দেখাচ্ছে। সেটি গুগলে সার্চ করে যাচাই করুন সেই মডেলের স্পেসিফিকেশন আসলেই কী হওয়া উচিত। অনেক সময় হার্ডওয়্যার পরিবর্তন করে কম দামের কম্পোনেন্ট বসিয়ে দেওয়া হয়, তাই Windows-এ System Info চেক করাও জরুরি।
আরেকটি সহজ উপায় হলো CPU-Z বা Speccy জাতীয় সফটওয়্যার চালিয়ে হার্ডওয়্যারের বিস্তারিত বের করা। এগুলো থেকে RAM, প্রসেসর, HDD/SSD সব যাচাই করা যায়। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ কাউকে সঙ্গে নিয়ে যাচাই করাই নিরাপদ।
- BIOS-এ গিয়ে মডেল ও সিরিয়াল চেক করুন
- মডেল নম্বর গুগলে সার্চ করে দেখুন
- ফেক বা রিপ্লিকা না কিনে ব্র্যান্ডেড ডিভাইস কিনুন
৫০০০ টাকার মধ্যে ভালো ল্যাপটপের লিস্ট (2025 আপডেট)
এখানে আমি ২০২৫ সালের আপডেট অনুযায়ী সেরা কিছু সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপের তালিকা দিলাম যেগুলো আপনি ৫০০০ টাকার মধ্যে পেতে পারেন।
এখন ২০২৫ সালের বাজারে আপনার ৫০০০ টাকার মধ্যে যেসব ল্যাপটপ পাওয়া যেতে পারে তার তালিকা নিচে দেওয়া হলো। এগুলো মূলত পুরনো কর্পোরেট মেশিন, যেগুলো এখনও সাধারণ ব্যবহার উপযোগী।
আমি ব্যক্তিগতভাবে Dell Latitude E5430 ব্যবহার করেছি – সেটির প্রসেসর ছিল Core i3 3rd Gen, এবং কাজের জন্য একদম সাশ্রয়ী ছিল। অন্যদিকে HP Elitebook 8460p হালকা ডিজাইন ও ভালো কীবোর্ডের জন্য জনপ্রিয়। Lenovo ThinkPad X220 বিশেষ করে টাইপিং ও লেখালেখির কাজে খুবই কম্ফোর্টেবল।
এই মডেলগুলো আপনি যদি ভালোভাবে যাচাই করে কিনেন তাহলে আপনার কাজের জন্য নির্ভরযোগ্য হবে। শুধু দাম কম বলেই খারাপ ভাববেন না, কারণ এগুলো একসময় ছিল অফিসিয়াল হাই-কোয়ালিটি ল্যাপটপ। তবে মনে রাখবেন এগুলোতে গেমিং বা হেভি সফটওয়্যার চালানো যাবে না – এরা শুধুই বেসিক কাজের জন্য আদর্শ।
মডেল | স্পেসিফিকেশন | প্রায় দাম |
---|---|---|
Dell Latitude E5430 | Core i3 3rd Gen, 4GB RAM, 320GB HDD | ৫,০০০ টাকা |
HP Elitebook 8460p | Intel Core i5 2nd Gen, 4GB RAM, 250GB HDD | ৪,৮০০ টাকা |
Lenovo ThinkPad X220 | Intel i3, 4GB RAM, 160GB HDD | ৪,৫০০ টাকা |
সুবিধা ও অসুবিধা – ৫০০০ টাকার ল্যাপটপ
কম দামের ল্যাপটপের কিছু সুবিধা থাকলেও কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। নিচের টেবিলটি দেখুন:
সুবিধা | অসুবিধা |
---|---|
খুবই কম দামে ব্যবহারযোগ্য ল্যাপটপ পাওয়া যায় | নতুন নয়, তাই সমস্যার সম্ভাবনা থাকে |
অনলাইন ক্লাস, ওয়ার্ড কাজ, ব্রাউজিং চালানো যায় | ব্যাটারি ব্যাকআপ কম হতে পারে |
অনেক ব্র্যান্ডের পুরাতন ভার্সন পাওয়া যায় | ওয়ারেন্টি বা গ্যারান্টি থাকে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে |
কেন কিনবেন এই বাজেটের ল্যাপটপ?
- শুরুতেই বড় অংকের টাকা খরচ না করে প্রযুক্তি শেখার সুযোগ
- অনলাইন ক্লাস, ভার্সিটি অ্যাসাইনমেন্ট ও টুকটাক কাজের জন্য যথেষ্ট
- চাইলেই পরে আপগ্রেড করা সম্ভব
- বাড়তি রিস্ক না নিয়ে খুব সাশ্রয়ী প্রযুক্তি অভিজ্ঞতা
কেন সস্তা ল্যাপটপ ভালো অপশন হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য
৫০০০ টাকায় ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের জন্য একটি ভালো শুরু হতে পারে। যারা অনলাইন ক্লাস, টাইপিং, বা সাধারণ কাজের জন্য ল্যাপটপ খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি সাশ্রয়ী সমাধান।
শিক্ষার্থীদের জন্য একটি সাশ্রয়ী মূল্যের ল্যাপটপ মানে শুধুই টাকা বাঁচানো নয়, বরং প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত হবার প্রথম ধাপ। অনেকেই হয়তো কম্পিউটার ল্যাবে ক্লাস করে, কিন্তু নিজের একটা ডিভাইস থাকা মানে শিখতে পারার সুযোগ বহুগুণে বাড়ে।
এই দামের ল্যাপটপে শিক্ষার্থীরা Zoom বা Google Meet ব্যবহার করে ক্লাস করতে পারেন, ছোটখাটো অ্যাসাইনমেন্ট লিখতে পারেন, কিংবা অনলাইন কোর্স করতে পারেন। Typing শেখা, Presentation তৈরি, PDF রিডিং – এগুলো নিয়মিতভাবে করতে পারলে শিক্ষা জীবনের গতি অনেক বেশি বাড়ে।
আমি এক শিক্ষার্থীকে চিনতাম যিনি মাত্র ৫০০০ টাকায় একটি HP ল্যাপটপ কিনেছিলেন এবং সেটি দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস ও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। হ্যাঁ, মাঝে মাঝে হ্যাং করত, কিন্তু দরকারের সময় সাপোর্ট দিয়েছিল। মূল কথা হলো – কাজ চালিয়ে নেওয়া।
অনলাইন ক্লাস ও টাইপিং কাজের জন্য উপযোগী
Zoom, Google Meet বা টাইপিং সফটওয়্যার চালাতে সাধারণত বেশি শক্তিশালী হার্ডওয়্যার লাগে না। তাই এই বাজেটের ল্যাপটপগুলো শিক্ষার্থীদের অনলাইন লার্নিংয়ের জন্য যথেষ্ট।
বেসিক ব্রাউজিং ও ওয়ার্ড প্রসেসিং
Chrome, MS Word বা Google Docs চালানোর মতো বেসিক কাজ সহজেই করা যায়।
৫০০০ টাকার ল্যাপটপে কী কী কাজ করতে পারবেন?
- MS Word, Excel, PowerPoint
- Zoom/Google Meet
- ইন্টারনেট ব্রাউজিং
- ইউটিউব দেখা
- বেসিক গ্রাফিক্স কাজ (Paint, Canva Lite)
কিছু সুরক্ষা টিপস – ল্যাপটপ কেনার পর কী করবেন?
- Windows clean install দিন
- Antivirus দিয়ে ফুল স্ক্যান করুন
- ব্যাটারি ও চার্জার ঠিক আছে কিনা যাচাই করুন
- USB পোর্ট, WiFi ও Bluetooth কাজ করছে কিনা দেখুন
কাস্টমার রিভিউ: যারা ৫০০০ টাকায় ল্যাপটপ কিনেছেন
“আমি Aponhut থেকে মাত্র ৪৮০০ টাকায় একটি Dell ল্যাপটপ কিনেছি। Zoom ক্লাস চালাই এবং টাইপিংও করি—এখনো ভালো চলছে।” – মাহমুদ, বরিশাল।
আমার পরিচিত একজন কলেজ ছাত্র, তানভীর, বলছিল যে সে মাত্র ৪৭০০ টাকায় একটি Lenovo ল্যাপটপ কিনেছে। যদিও দেখতে একদম নতুন ছিল না, কিন্তু Zoom ক্লাস, MS Word ও Google Chrome-এর জন্য যথেষ্ট ছিল। সে বলেছে, “একটা টাইমে ভাবছিলাম আর কিছুই সম্ভব না, কিন্তু এই ল্যাপটপটা কিনে নতুন আশার আলো পেলাম।”
আরেকজন ক্রেতা, যিনি নারায়ণগঞ্জে থাকেন, Aponhut-এর মাধ্যমে একটি পুরনো HP ল্যাপটপ কিনেছেন। তিনি বলেন, “এটা একদম নতুনের মতো না হলেও আমার লেখালেখি ও টাইপিংয়ের জন্য যথেষ্ট। আমি এখন ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য প্র্যাকটিস করছি।”
এই অভিজ্ঞতাগুলো থেকে বোঝা যায়, আপনি যদি বুঝে শুনে কিনেন এবং নিজের প্রয়োজন ঠিকভাবে নির্ধারণ করেন, তাহলে এই বাজেটেও একটি কার্যকর ল্যাপটপ পাওয়া সম্ভব।
ল্যাপটপ কেনা মানেই শেষ না – বরং ব্যবহার শুরু করার পরেই আসল নিরাপত্তার প্রশ্ন ওঠে। প্রথমেই আপনি নতুন করে Windows ইনস্টল দিন, পুরনো কিছু থাকলে তা রিমুভ করুন। আপনার Windows যদি পাইরেটেড হয়, তাহলে সেটি সক্রিয় করার ঝামেলা এড়াতে Linux ব্যবহার করা যেতে পারে।
তারপর একটি ভাল ফ্রি অ্যান্টিভাইরাস ইন্সটল করে পুরো ল্যাপটপ স্ক্যান করে নিন। অনেক সময় পুরাতন ল্যাপটপে পূর্বের ইউজারদের ভাইরাস থেকে যায়। USB ডিভাইস ব্যবহারে সতর্ক থাকুন এবং অপ্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ইনস্টল করা থেকে বিরত থাকুন।
WiFi, Bluetooth, HDMI, USB সব পোর্ট কাজ করছে কিনা চেক করুন। কাজ না করলে রিপ্লেসমেন্ট বা মেরামতের ব্যয় হিসেব করুন। ব্যাটারি ঠিকঠাক থাকলে ভালো, না হলে নতুন ব্যাটারি কিনে নিন।
৫০০০ টাকায় ল্যাপটপ মানেই সব কিছু করা যাবে না – এটা মেনে নিয়েই কিনতে হবে। তবে আশার কথা হচ্ছে, বেশ কিছু দরকারি কাজ ঠিকই চালানো সম্ভব। যেমন আপনি Word, Excel, PowerPoint-এর সাধারণ কাজ করতে পারবেন। Assignment তৈরি, রিপোর্ট লেখা, প্রেজেন্টেশন তৈরিতে কোনও সমস্যা হয় না।
ইন্টারনেট ব্রাউজিং, YouTube দেখা, PDF পড়া, ইমেইল চেক করা – এই কাজগুলোও ঠিকভাবে করা যায়। আবার কিছু কিছু লাইটওয়েট সফটওয়্যার যেমন Typing Tutor, ছোট কোডিং প্ল্যাটফর্ম (CodeBlocks বা Notepad++) এসব চালানো যায়।
তবে গেমিং, ভিডিও এডিটিং, বা Photoshop জাতীয় ভারী কাজের জন্য এই ল্যাপটপ উপযুক্ত নয়। অতএব, কাজ বুঝে কিনলে আপনি এই বাজেটেও অনেক কিছু করতে পারবেন।
“HP Elitebook ৫০০০ টাকায় পেয়েছি। একটু ধীরগতির হলেও আমার ব্লগ লেখা ও পিডিএফ কাজের জন্য যথেষ্ট।” – সায়মা, নারায়ণগঞ্জ।
প্রশ্নোত্তর (FAQs)
১. ৫০০০ টাকায় নতুন ল্যাপটপ কি পাওয়া যায়?
না, এই বাজেটে একদম নতুন ল্যাপটপ পাওয়া সম্ভব নয়। আপনি পাবেন সেকেন্ড হ্যান্ড বা রিফারবিশড ডিভাইস, যেগুলো ব্যবহার উপযোগী কিন্তু নতুন নয়।
২. ব্যবহৃত ল্যাপটপ কতদিন ভালো চলে?
ল্যাপটপের কন্ডিশনের ওপর নির্ভর করে এটি ৬ মাস থেকে ২ বছর পর্যন্ত ভালো চলতে পারে।
৩. রিফারবিশড ও সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপে পার্থক্য কী?
রিফারবিশড মানে যেটি সার্ভিসিং বা রিপ্লেসমেন্ট করে বিক্রির উপযোগী করে তোলা হয়। সেকেন্ড হ্যান্ড মানে সরাসরি ব্যবহার করা ডিভাইস।
৪. কোথায় সবচেয়ে ভালো ডিল পাওয়া যায়?
Aponhut, ও Facebook Marketplace থেকে কম দামে ভালো ল্যাপটপ পাওয়া যায়।
৫. কীভাবে যাচাই করব ল্যাপটপ ঠিকঠাক কাজ করছে?
BIOS, হার্ডডিস্ক চেক, RAM টেস্ট, স্ক্রিন ও কিবোর্ড যাচাই করুন। প্রয়োজনে একজন টেক এক্সপার্ট নিয়ে যান।
উপসংহার ও Key Takeaways
- ৫০০০ টাকায় ল্যাপটপ পাওয়া সম্ভব – সেকেন্ড হ্যান্ড বা রিফারবিশড
- ব্র্যান্ড যেমন Dell, HP, Lenovo
- ঢাকার মার্কেট ও অনলাইন সাইটে খুঁজুন
- প্রসেসর, RAM, স্ক্রিন ভালোভাবে যাচাই করুন
- শিক্ষার্থীদের জন্য এটি একটি বাজেট ফ্রেন্ডলি অপশন