মাদারবোর্ড কি? কত প্রকার এবং এর ব্যবহার কি কি বিস্তারিত
মাদারবোর্ড কি? কত প্রকার এবং এর ব্যবহার কি কি বিস্তারিত
আমরা জানি, একটি কম্পিউটার অনেকগুলো কম্পোনেন্ট নিয়ে তৈরি হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট হল মাদারবোর্ড। কিন্তু মাদারবোর্ড সম্পর্কে সঠিক তথ্য অনেকেরই জানা নেই। তাই আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাদারবোর্ড কি, এর বিভিন্ন কাজ ও পরিচিতি নিয়ে আলোচনা করব। মাদারবোর্ডের কাজ কি? মাদারবোর্ডের প্রকারভেদ এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। তাই আর দেরি না করে চলুন শুরু করি এবং মাদারবোর্ড সম্পর্কে বিস্তারিত জানি।
মাদারবোর্ড কি ? (What is motherboard)
মাদারবোর্ড হল প্রতিটি কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় মুদ্রিত সার্কিট বোর্ড, যা সিস্টেমের হৃদপিণ্ড হিসেবে কাজ করে। এটি আপনার কম্পিউটারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার উপাদান যেমন সিপিইউ (CPU), র্যাম (RAM), হার্ড ড্রাইভ ইত্যাদি ধরে রাখে এবং তাদের মধ্যে সুষ্ঠু সংযোগ ও যোগাযোগ স্থাপন করে। মাদারবোর্ডের মাধ্যমে এই উপাদানগুলো একটি সমন্বিত এবং কার্যকরী ইউনিট হিসেবে কাজ করে, যা পুরো কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা নির্ধারণ করে।
মাদারবোর্ড শব্দটির বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, "Mother" শব্দের অর্থ "মা" এবং "Board" শব্দের অর্থ সাধারণ বোর্ড। একটি পরিবারের ক্ষেত্রে, যেমন বাবা-মা পরিবারের পরিচালনা ও সন্তানদের সুরক্ষা এবং উন্নতির জন্য দায়িত্ব পালন করেন, তেমনই মাদারবোর্ড কম্পিউটারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার উপাদানগুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এটি সিপিইউ, র্যাম এবং অন্যান্য কম্পোনেন্টগুলির মধ্যে ডেটা আদান-প্রদান করে, যা কম্পিউটারের কার্যকারিতা এবং স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করে।
মাদারবোর্ডের গুরুত্ব বুঝতে হলে বলা যেতে পারে, এটি কম্পিউটারের স্নায়ুতন্ত্রের মতো কাজ করে। যেমন একটি শরীরের মস্তিষ্ক এবং স্নায়ুতন্ত্র বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে এবং তাদের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনই মাদারবোর্ড কম্পিউটারের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের সঠিকভাবে কাজ করার সুযোগ প্রদান করে।
মাদারবোর্ড ছাড়া কম্পিউটার অকেজো হয়ে পড়ে, কারণ এটি ছাড়া সিপিইউ, র্যাম, হার্ড ড্রাইভ ইত্যাদি কোনো উপাদানই একে অপরের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে পারে না। তাই, মাদারবোর্ডকে কম্পিউটারের অপরিহার্য কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গণ্য করা হয়, যা পুরো সিস্টেমের কার্যকারিতা এবং কার্যক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে এবং কম্পিউটারের দীর্ঘস্থায়িত্ব ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করে।
মাদারবোর্ড বলতে কি বোঝায়?
মাদারবোর্ড হল কম্পিউটার সিস্টেমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি এক ধরনের মুদ্রিত সার্কিট বোর্ড (PCB), যা কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট (CPU) সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ধারণ করে এবং তাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।
মাদারবোর্ডের মূল ভূমিকা হল সিপিইউ, র্যাম, হার্ড ড্রাইভ, গ্রাফিক্স কার্ড এবং অন্যান্য হার্ডওয়্যার উপাদানগুলিকে একত্রিত করে একটি কার্যকরী সিস্টেমে পরিণত করা। এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে প্রতিটি উপাদান একে অপরের সাথে সুষ্ঠুভাবে যোগাযোগ করতে পারে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।
মাদারবোর্ড ছাড়া কম্পিউটারের কার্যক্রম সম্পূর্ণ অচল হয়ে পড়ে। এটি কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ডেটা ও বিদ্যুতের প্রবাহ নিশ্চিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন আপনি কোনো কাজ করতে কম্পিউটার চালান, তখন সিপিইউতে প্রক্রিয়াকরণের জন্য ডেটা পাঠানোর দায়িত্ব থাকে মাদারবোর্ডের উপর। আবার প্রক্রিয়াকৃত ডেটা র্যামে সংরক্ষণ এবং হার্ড ড্রাইভে লেখার কাজও মাদারবোর্ডের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়।
মাদারবোর্ডকে একটি পরিবারের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে যেখানে এটি পরিবারের মস্তিষ্ক এবং হৃদয়ের ভূমিকা পালন করে। যেমন একটি পরিবারে মা-বাবা পরিবারের সমস্ত কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ এবং সমন্বয় করেন, তেমনই মাদারবোর্ড কম্পিউটারের সমস্ত উপাদানগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে। এটি নিশ্চিত করে যে প্রতিটি উপাদান সঠিকভাবে কাজ করছে এবং সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য পাচ্ছে।
মাদারবোর্ডের উপরে অনেকগুলি স্লট এবং পোর্ট থাকে যেখানে বিভিন্ন উপাদান সংযুক্ত করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে র্যাম স্লট, সিপিইউ সকেট, গ্রাফিক্স কার্ডের জন্য PCIe স্লট, স্টোরেজ ডিভাইসের জন্য SATA পোর্ট এবং ইউএসবি ডিভাইস সংযোগের জন্য ইউএসবি পোর্ট। এই সব স্লট এবং পোর্টগুলির মাধ্যমে কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশ সংযুক্ত করা হয় এবং তাদের মধ্যে তথ্যের আদান-প্রদান ঘটে।
সব মিলিয়ে, মাদারবোর্ড হল একটি কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক যা সমস্ত উপাদানকে একত্রিত করে একটি সমন্বিত এবং কার্যকরী সিস্টেমে রূপান্তরিত করে। এটি কম্পিউটারের কার্যক্ষমতা এবং স্থায়িত্বের মূল চাবিকাঠি।
মাদারবোর্ডের বিভিন্ন প্রকারভেদ
চলুন এবার আমরা মাদারবোর্ডের প্রকারভেদ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই। মাদারবোর্ড প্রধানত দুটি প্রকারে বিভক্ত:
১. নন ইন্ট্রিগেটেড মাদারবোর্ড (Non-Integrated Motherboard)
২. ইন্টিগ্রেটেড মাদারবোর্ড (Integrated Motherboard)
১. নন ইন্ট্রিগেটেড মাদারবোর্ড (Non-Integrated Motherboard)
নন ইন্ট্রিগেটেড মাদারবোর্ড এমন একটি ধরণের মাদারবোর্ড যেখানে CPU, RAM, ভিডিও কার্ড, সাউন্ড কার্ড এবং অন্যান্য কম্পোনেন্টগুলি আলাদা আলাদা থাকে এবং সহজেই আপগ্রেড করা যায়। এই ধরনের মাদারবোর্ড প্রধানত ডেস্কটপ কম্পিউটারগুলোতে ব্যবহৃত হয়।
নন ইন্ট্রিগেটেড মাদারবোর্ডের কিছু বৈশিষ্ট্য:
উন্নত আপগ্রেড ক্ষমতা: আপনি প্রয়োজন অনুসারে যেকোনো কম্পোনেন্ট আপগ্রেড করতে পারেন।
উচ্চ পারফরম্যান্স: সাধারণত এই মাদারবোর্ডগুলি উচ্চতর পারফরম্যান্স প্রদান করে।
বেশি বিদ্যুৎ খরচ: নন ইন্ট্রিগেটেড মাদারবোর্ডগুলি তুলনামূলকভাবে বেশি বিদ্যুৎ খরচ করে।
বড় আকার: এই মাদারবোর্ডগুলি আকারে বড় হয় এবং প্রায়ই দামেও বেশি হয়।
২. ইন্টিগ্রেটেড মাদারবোর্ড (Integrated Motherboard)
ইন্টিগ্রেটেড মাদারবোর্ডে CPU, RAM, ভিডিও কার্ড, সাউন্ড কার্ড এবং অন্যান্য কম্পোনেন্টগুলি মাদারবোর্ডের সাথেই সংযুক্ত থাকে, ফলে আলাদা করে আপগ্রেড করার সুযোগ থাকে না। এই ধরনের মাদারবোর্ড প্রধানত পোর্টেবল ডিভাইস যেমন ল্যাপটপে ব্যবহৃত হয়।
ইন্টিগ্রেটেড মাদারবোর্ডের কিছু বৈশিষ্ট্য:
কম আকার: এই মাদারবোর্ডগুলি আকারে ছোট হয়, ফলে কম জায়গা লাগে।
কম বিদ্যুৎ খরচ: ইন্টিগ্রেটেড মাদারবোর্ডগুলি কম বিদ্যুৎ খরচ করে, যা পোর্টেবল ডিভাইসের জন্য উপযুক্ত।
সাশ্রয়ী: সাধারণত এই ধরনের মাদারবোর্ডগুলি তুলনামূলকভাবে কম দামে পাওয়া যায়।
কম আপগ্রেড ক্ষমতা: যেহেতু কম্পোনেন্টগুলি মাদারবোর্ডের সাথেই সংযুক্ত থাকে, তাই আলাদা করে আপগ্রেড করা সম্ভব নয়।
সংক্ষেপে বললে:
মাদারবোর্ডের এই দুই প্রকারের মধ্যে কোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত হবে, তা নির্ভর করে আপনার প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবহারের উপর। ডেস্কটপ ব্যবহারকারীদের জন্য নন ইন্ট্রিগেটেড মাদারবোর্ড বেশি উপযুক্ত, কারণ এটি আপগ্রেডের সুযোগ দেয় এবং উচ্চতর পারফরম্যান্স প্রদান করে। অন্যদিকে, ল্যাপটপ ও অন্যান্য পোর্টেবল ডিভাইসের জন্য ইন্টিগ্রেটেড মাদারবোর্ড উপযুক্ত, কারণ এটি কম বিদ্যুৎ খরচ করে এবং আকারে ছোট হয়।
মোবাইলের মাদারবোর্ড কি?
মোবাইল ফোনের মাদারবোর্ড হল একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রিন্টেড সার্কিট বোর্ড (PCB), যা মোবাইল ডিভাইসের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ কম্পোনেন্ট এবং কন্ট্রোলার ধারণ করে। এটি মূলত মোবাইল ফোনের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ইউনিট হিসেবে কাজ করে এবং ফোনটির বিভিন্ন অংশকে সংযুক্ত ও সমন্বিত করে।
মোবাইল মাদারবোর্ডের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং তাদের কার্যক্রম:
র্যাম (RAM): এটি মোবাইলের অস্থায়ী মেমরি, যেখানে ডেটা এবং অ্যাপ্লিকেশনগুলি দ্রুত অ্যাক্সেসের জন্য সঞ্চিত হয়।
এসডি কার্ড স্লট: এই স্লটটি অতিরিক্ত স্টোরেজ ক্ষমতা যোগ করতে ব্যবহৃত হয়, যাতে ব্যবহারকারী ফাইল, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে পারেন।
সিম স্লট: সিম কার্ড স্লটটি মোবাইল নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হওয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, যা ফোন কল এবং ডেটা সার্ভিসের সুবিধা প্রদান করে।
চার্জিং সার্কিট: এটি মোবাইলের ব্যাটারি চার্জ করার জন্য প্রয়োজনীয় সার্কিট, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে।
মাইক্রোফোন ও স্পিকার: মাইক্রোফোন কথোপকথন ও অডিও ইনপুটের জন্য এবং স্পিকার সাউন্ড আউটপুটের জন্য ব্যবহৃত হয়।
অন্যান্য কন্ট্রোলার: এতে আরো বিভিন্ন কন্ট্রোলার থাকে, যেমন ডিসপ্লে কন্ট্রোলার, সেন্সর কন্ট্রোলার ইত্যাদি, যা মোবাইল ফোনের বিভিন্ন ফিচার ও ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে।
মাদারবোর্ডের মাধ্যমে এই সমস্ত অংশগুলি একত্রে কাজ করে, যা আপনার মোবাইল ফোনকে সক্রিয় এবং কার্যকরী রাখে। এটি ডেটা এবং বিদ্যুতের প্রবাহ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে, যা মোবাইল ফোনের পারফরম্যান্স এবং স্থায়িত্ব নিশ্চিত করে।
মোবাইল মাদারবোর্ডের গঠন ও কার্যক্রম একটি ছোট আকারের কম্পিউটার মাদারবোর্ডের মতোই, তবে এটি আরও কমপ্যাক্ট এবং শক্তিশালীভাবে ইন্টিগ্রেটেড, কারণ মোবাইল ডিভাইসগুলি ছোট এবং বহনযোগ্য হতে হয়। এটি মোবাইল ফোনের প্রসেসর, মেমরি, স্টোরেজ, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ হার্ডওয়্যার কম্পোনেন্টগুলিকে একত্রিত করে একটি সামগ্রিক সিস্টেমে পরিণত করে।
সব মিলিয়ে, মোবাইল মাদারবোর্ড হল মোবাইল ফোনের কেন্দ্রবিন্দু, যা ডিভাইসটির সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এবং এটি নিশ্চিত করে যে ফোনটি সঠিকভাবে কাজ করছে। এটি আপনার মোবাইলের হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার উপাদানগুলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করে, যা আপনার ডিভাইসকে দ্রুত, কার্যকর এবং নির্ভরযোগ্যভাবে কাজ করতে সাহায্য করে।
ভালো মাদারবোর্ড চেনার উপায়
মাদারবোর্ড কেনার আগে অবশ্যই কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন। একটি ভালো মাদারবোর্ড নির্বাচন করা আপনার কম্পিউটারের পারফরম্যান্স এবং দীর্ঘমেয়াদি আপগ্রেডের সুযোগ নিশ্চিত করে। চলুন দেখে নিই ভালো মাদারবোর্ড চেনার কিছু উপায়:
১. প্রসেসরের সাথে সামঞ্জস্যতা:
সবচেয়ে ভালো মাদারবোর্ড চেনার প্রধান উপায় হল আপনার কম্পিউটারের প্রসেসরের সাথে সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করা। আপনি যে প্রসেসরটি কিনতে চাচ্ছেন, সেই অনুযায়ী মাদারবোর্ড বেছে নেওয়াই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। প্রতিটি প্রসেসরের জন্য নির্দিষ্ট সকেট টাইপ থাকে, তাই আপনার প্রসেসরের সঠিক সকেট টাইপ নিশ্চিত করুন এবং সেই অনুযায়ী মাদারবোর্ড নির্বাচন করুন।
২. ভবিষ্যতে আপগ্রেডের সুযোগ:
মাদারবোর্ড কিনার সময় এমন একটি মডেল বেছে নিন যা ভবিষ্যতে আপগ্রেড করার সুযোগ দেয়। উদাহরণস্বরূপ, মাদারবোর্ডে অতিরিক্ত র্যাম স্লট, পিসিআই এক্সপ্রেস (PCIe) স্লট, এবং স্টোরেজ ডিভাইস সংযুক্ত করার জন্য সাট (SATA) পোর্ট থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি নিশ্চিত করবে যে আপনি ভবিষ্যতে সহজেই আপনার সিস্টেম আপগ্রেড করতে পারবেন।
৩. মাদারবোর্ডের আকার:
আপনার ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত মাদারবোর্ডের আকার নির্বাচন করুন। গেমিং বা ভিডিও এডিটিং এর জন্য ATX মাদারবোর্ড ভালো অপশন হতে পারে, কারণ এগুলি বেশি স্লট এবং পোর্ট সহ আসে এবং উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসরের জন্য উপযুক্ত। অন্যদিকে, যদি আপনি একটি ছোট এবং কম শক্তিশালী সিস্টেম চান, তবে Micro-ATX বা Mini-ITX মাদারবোর্ড বিবেচনা করতে পারেন।
৪. স্লট এবং পোর্টের সংখ্যা:
মাদারবোর্ডের স্লট এবং পোর্টের সংখ্যা খেয়াল করুন। ভালো মাদারবোর্ডে পর্যাপ্ত SATA স্লট, RAM স্লট এবং USB পোর্ট থাকা গুরুত্বপূর্ণ। এগুলি নিশ্চিত করবে যে আপনি পর্যাপ্ত স্টোরেজ ডিভাইস, মেমরি এবং অন্যান্য পেরিফেরাল সংযুক্ত করতে পারবেন।
৫. অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য:
কিছু মাদারবোর্ড অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য সহ আসে যা আপনার জন্য উপকারী হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, বিল্ট-ইন Wi-Fi, ব্লুটুথ, উন্নত অডিও কোডেক, এবং RGB লাইটিং। আপনি যদি গেমিং বা উচ্চ ক্ষমতার কাজের জন্য মাদারবোর্ড কিনতে চান, তবে এই বৈশিষ্ট্যগুলি আপনার সিস্টেমের পারফরম্যান্স এবং ব্যবহার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে পারে।
৬. ব্র্যান্ড এবং রিভিউ:
বিশ্বস্ত ব্র্যান্ড থেকে মাদারবোর্ড কিনুন এবং ব্যবহারকারীদের রিভিউ পড়ে নিন। এটি আপনাকে একটি নির্ভরযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী মাদারবোর্ড বেছে নিতে সাহায্য করবে।
মাদারবোর্ড কেনার সময় এসব বিষয় বিবেচনা করে আপনি একটি ভালো মানের মাদারবোর্ড নির্বাচন করতে পারবেন। আপনার কম্পিউটারের প্রসেসরের সাথে সামঞ্জস্য, ভবিষ্যতে আপগ্রেডের সুযোগ, মাদারবোর্ডের আকার, স্লট ও পোর্টের সংখ্যা, অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্য এবং ব্র্যান্ডের মান বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এসব বিষয় খেয়াল রেখে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সঠিক মাদারবোর্ড বেছে নিতে পারবেন, যা আপনার কম্পিউটারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকরী রাখবে।
মাদারবোর্ডের দাম ২০২৪
বর্তমানে বাজারে বিভিন্ন দামের মাদারবোর্ড পাওয়া যায়, যার মূল্য আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। মাদারবোর্ড কেনার আগে, আপনার বাজেট নির্ধারণ করে একটি ভালো মানের মাদারবোর্ড বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বাজারে বিভিন্ন মূল্য সীমার মধ্যে মাদারবোর্ড পাওয়া যায়, যা আপনার ব্যবহারের ধরন এবং প্রয়োজন অনুযায়ী নির্বাচন করা উচিত।
বাজেট অনুযায়ী মাদারবোর্ডের নির্বাচন:
মাদারবোর্ডের দাম বিভিন্ন উপাদান, প্রযুক্তি, এবং বৈশিষ্ট্যের উপর নির্ভর করে। আপনি যদি একটি সাধারন ব্যবহারের জন্য মাদারবোর্ড খুঁজছেন, তাহলে আপনি কম বাজেটের মধ্যে ভালো মানের মাদারবোর্ড পেতে পারেন। অন্যদিকে, যদি আপনি গেমিং, ভিডিও এডিটিং বা উচ্চ ক্ষমতার কাজের জন্য মাদারবোর্ড কিনতে চান, তাহলে উচ্চ বাজেটের মাদারবোর্ড নির্বাচন করা বুদ্ধিমানের কাজ।
বর্তমান বাজারে মাদারবোর্ডের মূল্য:
বর্তমান সময়ে, বাজারে বিভিন্ন দামের মাদারবোর্ড পাওয়া যায়। সাধারণত, মাদারবোর্ডের দাম ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। এখানে কিছু মূল্য সীমা অনুযায়ী মাদারবোর্ডের বৈশিষ্ট্যগুলি দেওয়া হল:
১. ৪ হাজার টাকা থেকে ১০ হাজার টাকার মধ্যে:
সাধারণ ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত।
সাধারণত বাজেট ফ্রেন্ডলি প্রসেসর এবং র্যামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রাথমিক পোর্ট এবং স্লটগুলি অন্তর্ভুক্ত।
২. ১০ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকার মধ্যে:
মিড-রেঞ্জ কম্পিউটার সিস্টেমের জন্য উপযুক্ত।
উচ্চ ক্ষমতার প্রসেসর এবং র্যামের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
গেমিং এবং মাল্টিটাস্কিংয়ের জন্য ভালো পারফরম্যান্স।
৩. ৩০ হাজার টাকা থেকে ৬০ হাজার টাকার মধ্যে:
উচ্চ ক্ষমতার কম্পিউটার সিস্টেমের জন্য উপযুক্ত।
উন্নত প্রযুক্তি এবং বৈশিষ্ট্য অন্তর্ভুক্ত, যেমন উন্নত কুলিং সিস্টেম, বিল্ট-ইন Wi-Fi, RGB লাইটিং ইত্যাদি।
গেমিং, ভিডিও এডিটিং এবং অন্যান্য উচ্চ ক্ষমতার কাজের জন্য আদর্শ।
৪. ৬০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত:
প্রিমিয়াম মাদারবোর্ড।
সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স এবং উন্নত প্রযুক্তি সহ।
প্রফেশনাল গেমিং, ভিডিও প্রোডাকশন, এবং অন্যান্য উচ্চ ক্ষমতার কাজের জন্য উপযুক্ত।
উপসংহার
মাদারবোর্ডের দাম নির্ধারণে আপনার প্রয়োজন এবং বাজেট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বাজারে আপনি ৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন দামের মাদারবোর্ড পেতে পারেন। আপনার ব্যবহারের ধরন এবং ভবিষ্যতে আপগ্রেডের সম্ভাবনা বিবেচনা করে সঠিক মাদারবোর্ড নির্বাচন করুন। এতে আপনি আপনার কম্পিউটারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য কার্যকরী এবং শক্তিশালী রাখতে সক্ষম হবেন।