ওয়াই-ফাই কি? - সংজ্ঞা এবং প্রকার

 প্রকাশ: ৩০ অগাস্ট ২০২৪, ০৯:০৯ অপরাহ্ন   |   সংজ্ঞা

ওয়াই-ফাই কি? - সংজ্ঞা এবং প্রকার
প্রযুক্তির অগ্রগতির এই যুগে, ওয়াইফাই এক অনন্য আবিষ্কার হিসেবে মানুষকে একত্রিত করে রেখেছে, যেন একটি অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা সবাই। আমাদের মধ্যে অনেকেই হয়তো ওয়াইফাই এর নাম শুনেছেন, কিন্তু এটি আসলে কী, এবং কীভাবে কাজ করে, সেই সম্পর্কে ধারণা নেই। আপনার স্মার্ট টেকনোলজির সাথে এই অত্যাধুনিক কৌশল যুক্ত করে সহজেই ইন্টারনেট এবং ডেটা আদান প্রদানে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব।

এই ব্লগ পোস্টে আমরা ওয়াইফাই এর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করব, যাতে আপনার সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাওয়া যায় এবং আপনি ওয়াইফাই ব্যবহার সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা লাভ করতে পারেন। চলুন, ওয়াইফাই এর রহস্য উন্মোচন করি এবং জানি কীভাবে এই প্রযুক্তি আমাদের জীবনে এতটা গুরুত্ব বহন করে।

ওয়াইফাই কি?

ওয়াইফাই, যার পূর্ণরূপ হচ্ছে "Wireless Fidelity," হলো একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যা তারবিহীনভাবে উচ্চ গতির রেডিও সিগন্যাল ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণ ও গ্রহণ করতে সক্ষম। বর্তমান ডিজিটাল যুগে, যেখানে আমাদের জীবন ক্রমাগতভাবে প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে, সেখানে WiFi একটি অপরিহার্য উপাদান হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইন্টারনেট ব্যবহার, ডেটা শেয়ারিং, কিংবা অফিসের কাজ, সবকিছুতেই দ্রুতগতির এবং নির্ভরযোগ্য নেটওয়ার্ক সংযোগের প্রয়োজনীয়তা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে WiFi আমাদের প্রতিদিনের জীবনে অসাধারণ সুবিধা প্রদান করে আসছে। 

ওয়াইফাই প্রযুক্তির ভিত্তি হলো ওয়্যারলেস লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (WLAN) এর স্ট্যান্ডার্ড যা IEEE 802.11 দ্বারা নির্ধারিত। এই স্ট্যান্ডার্ডটি তারবিহীন ডেটা ট্রান্সফারের জন্য সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে পরিচিত। 

WiFi এর মাধ্যমে, আমরা সহজেই ইন্টারনেট সংযোগ পেতে পারি, ফাইল শেয়ার করতে পারি, এবং আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো আরও দ্রুত এবং কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে পারি। সুতরাং, WiFi প্রযুক্তির গুরুত্ব এবং এর ব্যবহারিক সুবিধাগুলো যে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ছড়িয়ে পড়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

ওয়াইফাই আবিষ্কার করেন কে? 

ওয়াইফাই প্রযুক্তির আবিষ্কারক হিসেবে জন ও'সুলিভান (John O’Sullivan) এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৭ সালে, তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারটি করেছিলেন যা আজকের দিন পর্যন্ত আমাদের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াইফাই বা Wireless Fidelity প্রযুক্তি মানুষের জীবনযাত্রা ও কাজের ধরণে বিপ্লব ঘটিয়েছে।

এই আবিষ্কারটি শুধুমাত্র দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ নিশ্চিত করতেই নয়, বরং বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ ব্যবস্থায়ও এক বিশাল পরিবর্তন এনেছে। ওয়াইফাই প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন যে কোনো তথ্য বা ডেটা শেয়ারিং প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ এবং কার্যকরী হয়ে উঠেছে। এই প্রযুক্তির কারণে পৃথিবী আজ এক বিশাল ডিজিটাল গ্রামে রূপান্তরিত হয়েছে, যেখানে আমরা সবাই একে অপরের সাথে সংযুক্ত।

জন ও'সুলিভান এর এই যুগান্তকারী আবিষ্কার আমাদেরকে একটি নতুন যুগের সূচনা করিয়েছে, যেখানে যোগাযোগের কোনো সীমা নেই, এবং তথ্য প্রবাহের গতি আগের চেয়ে অনেক গুণ বেড়ে গেছে। সুতরাং, ওয়াইফাই প্রযুক্তি শুধুমাত্র একটি আবিষ্কার নয়, এটি আমাদের আধুনিক জীবনের অন্যতম প্রধান ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হয়।

ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের প্রকারভেদ? 

ওয়াইফাই প্রযুক্তি বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ডের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রকারে বিভক্ত হয়েছে। প্রতিটি স্ট্যান্ডার্ডের রয়েছে নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার ক্ষেত্র। নিচে এই বিভিন্ন স্ট্যান্ডার্ডের বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

1. IEEE 802.11a: এই স্ট্যান্ডার্ডটি মূলত বাণিজ্যিক বা অফিসিয়াল কাজে ব্যবহৃত হয়। এর ফ্রিকোয়েন্সি ৫ GHz, যা উচ্চগতির ডেটা আদান-প্রদানের জন্য উপযুক্ত। ১১৫ ফুট উচ্চতায় এটি সর্বোচ্চ ৫৪ Mbps গতিতে ডেটা ট্রান্সফার করতে সক্ষম। ১৯৯৯ সালে এর আবিষ্কারের পর থেকে, এটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

2. IEEE 802.11b: ২.৪ GHz ফ্রিকোয়েন্সি এবং ১১ Mbps গতির এই ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ডটি সাধারণত বাসাবাড়ির ব্যবহারের জন্য উপযোগী বলে গণ্য করা হয়। এটি কম খরচে নির্ভরযোগ্য সংযোগ প্রদান করে।

3. IEEE 802.11g: ৫৪ Mbps গতি সম্পন্ন এই WiFi স্ট্যান্ডার্ডটি ২০০৩ সালে তৈরি করা হয় এবং দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। উচ্চগতির ডেটা ট্রান্সফারের জন্য এটি আজও অনেকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে।

4. IEEE 802.11n: ২০০৯ সালে এই নতুন স্ট্যান্ডার্ডটি তৈরি হয় যা ডুয়াল-ব্যান্ড রাউটার নিয়ে কাজ করে। এতে ২.৪ GHz এবং ৫ GHz, উভয় ফ্রিকোয়েন্সি সমর্থিত। এর ফলে এটি উচ্চতর গতি এবং বিস্তৃত কভারেজ প্রদান করতে সক্ষম।

5. IEEE 802.11ac: সর্বশেষ এবং সর্বাধিক উন্নত এই স্ট্যান্ডার্ডটি ২০১৩ সালে তৈরি হয়। এটি ৫ GHz ফ্রিকোয়েন্সিতে ১.৩ Gbps পর্যন্ত গতি প্রদান করতে পারে, যা এখন পর্যন্ত সবচেয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন WiFi স্ট্যান্ডার্ড। এর মাধ্যমে সেকেন্ডের থেকেও কম সময়ে ফাইল ট্রান্সফার করা সম্ভব, যা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে এক বিশাল অগ্রগতি।

এই বিভিন্ন ওয়াইফাই স্ট্যান্ডার্ডের বৈশিষ্ট্য এবং ক্ষমতা নির্ভর করে তাদের ফ্রিকোয়েন্সি, গতি এবং ব্যবহারের উপযোগিতার ওপর। প্রতিটি স্ট্যান্ডার্ড নির্দিষ্ট প্রয়োজনের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অসাধারণ সুবিধা প্রদান করে।

ওয়াইফাই কিভাবে কাজ করে? 

ওয়াইফাই কীভাবে কাজ করে তা সহজভাবে বোঝাতে গেলে, বলা যায় যে এটি আপনার স্মার্ট ডিভাইসের ফ্রিকোয়েন্সিকে রাউটারের মাধ্যমে রেডিও তরঙ্গের সাহায্যে তথ্য প্রেরণ করে। ওয়াইফাই নেটওয়ার্কটি আসলে একটি দ্বিমুখী ট্রাফিক ব্যবস্থা, যেখানে রেডিও সিগন্যাল কোডেড আকারে আদান-প্রদান হয়। এই প্রক্রিয়ায় সাধারণত ২.৪ GHz থেকে ৫ GHz ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহৃত হয়।

যেকোনো ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, স্মার্টফোন বা অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসগুলোর মধ্যে WiFi সংযোগ স্থাপন করতে হলে প্রথমেই সেই ডিভাইসগুলোতে একটি ওয়্যারলেস অ্যাডাপ্টার থাকতে হবে। এই ওয়্যারলেস অ্যাডাপ্টার না থাকলে, ডিভাইসটি WiFi সংযোগ গ্রহণ করতে সক্ষম হবে না।

রাউটার, যা সিগন্যাল ডিকোডার নামেও পরিচিত, সেই রেডিও সিগন্যালগুলোকে ডিকোড করে এবং আপনার ডিভাইসে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেয়। যদি আপনি ডেস্কটপ কম্পিউটার ব্যবহার করেন, তবে USB পোর্টালের মাধ্যমে ওয়াইফাই সংযোগ স্থাপন করতে হবে।

ওয়াইফাই প্রযুক্তির এই জটিল প্রক্রিয়াটি আসলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট সংযোগকে সহজ ও দ্রুততর করে তুলেছে, যার ফলে আমরা আমাদের কাজগুলো আরও কার্যকরভাবে সম্পন্ন করতে পারি।

ওয়াইফাই এর বৈশিষ্ট্য 

ওয়াইফাইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা এই প্রযুক্তিকে আমাদের জীবনে অপরিহার্য করে তুলেছে। নিচে এই বৈশিষ্ট্যগুলো আরও বিস্তারিতভাবে উপস্থাপন করা হলো:

১. উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও ওয়েভ ব্যবহার: WiFi প্রযুক্তি উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সির রেডিও তরঙ্গ ব্যবহার করে ডেটা প্রেরণ ও গ্রহণ করে। এই ফ্রিকোয়েন্সির মাধ্যমে তথ্য অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এবং নির্ভুলভাবে স্থানান্তরিত হয়।

২. একাধিক স্মার্ট ডিভাইসের সাথে সংযোগ স্থাপন: WiFi নেটওয়ার্কের মাধ্যমে একাধিক স্মার্ট ডিভাইস যেমন—কম্পিউটার, স্মার্টফোন, ট্যাবলেট ইত্যাদির সাথে সহজেই সংযোগ স্থাপন করা যায়। এটি একই সঙ্গে বিভিন্ন ডিভাইসে ইন্টারনেট এবং ডেটা শেয়ারিংয়ের সুবিধা প্রদান করে।

৩. লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN) স্ট্যান্ডার্ড IEEE 802.11: ওয়াইফাই প্রযুক্তি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN) স্ট্যান্ডার্ড IEEE 802.11 এর ওপর ভিত্তি করে কাজ করে। এই স্ট্যান্ডার্ডটি নির্ভরযোগ্য এবং কার্যকরী ডেটা ট্রান্সফার নিশ্চিত করে।

৪. ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী নেটওয়ার্ক কভারেজের ক্ষমতা: WiFi প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবহৃত ফ্রিকোয়েন্সির ওপর ভিত্তি করে নেটওয়ার্কের কভারেজ এরিয়া নির্ধারিত হয়। উচ্চতর ফ্রিকোয়েন্সি সাধারণত ছোট রেঞ্জে উচ্চ গতির সংযোগ প্রদান করে, যেখানে নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি বড় রেঞ্জে অপেক্ষাকৃত কম গতির সংযোগ নিশ্চিত করে।

এই বৈশিষ্ট্যগুলো WiFi প্রযুক্তিকে একটি শক্তিশালী ও কার্যকরী নেটওয়ার্ক ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।

ওয়াইফাই এর সুবিধা

ওয়াইফাই (Wi-Fi) হলো একটি আধুনিক প্রযুক্তি যা ইন্টারনেট অ্যাক্সেস এবং নেটওয়ার্ক সংযোগের ক্ষেত্রে ব্যাপক সুবিধা প্রদান করে। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ইন্টারনেট ব্যবহারকে সহজ এবং কার্যকর করে তুলেছে। ওয়াইফাই ব্যবহারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা তুলে ধরা হলো:

১. ইন্টারনেট অ্যাক্সেসের সহজলভ্যতা: ওয়াইফাই ব্যবহার করে খুব সহজেই ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করা যায়। এটি যেকোনো সময় এবং যেকোনো স্থানে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করে, যা বিশেষ করে মোবাইল এবং ল্যাপটপ ব্যবহারকারীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী: লোকাল এরিয়ায় ওয়াইফাই প্রযুক্তি ব্যবহার করতে খরচ খুবই কম। এটি ক্যাবল সংযোগের তুলনায় অনেক সস্তা এবং সেটআপ করাও সহজ।

৩. লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক: ওয়াইফাই ব্যবহার করে সহজেই একটি লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (LAN) তৈরি করা যায়। এটি অফিস, স্কুল, এবং বাড়িতে বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

৪. দ্রুত এবং কার্যকর নেটওয়ার্কিং: ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে উচ্চ গতির নেটওয়ার্ক সংযোগ পাওয়া যায়। এটি ডাটা ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং নির্ভরযোগ্য সেবা প্রদান করে।

৫. ক্যাবলিংয়ের প্রয়োজন নেই: ওয়াইফাই ব্যবহারের অন্যতম প্রধান সুবিধা হলো এটি ক্যাবল ছাড়াই নেটওয়ার্ক সংযোগ প্রদান করে। এটি ইনস্টলেশন এবং ব্যবহারে ঝামেলামুক্ত করে তোলে।

৬. বহুস্থানে ব্যবহারযোগ্য: ওয়াইফাই প্রযুক্তি যেকোনো স্থানে ব্যবহারযোগ্য। এটি শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নয়; আপনি যেকোনো জায়গায় ওয়াইফাই রাউটার বা হটস্পট থাকলে সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন।

৭. ডাটা আদান প্রদান: ওয়াইফাই ব্যবহার করে সহজেই বিভিন্ন ডিভাইসের মধ্যে ডাটা শেয়ার করা যায়। এটি ফাইল ট্রান্সফারের ক্ষেত্রে অনেক সময় সাশ্রয় করে।

৮. একাধিক ডিভাইস সংযোগ: ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে একাধিক কম্পিউটার এবং অন্যান্য ডিভাইসকে তার ছাড়াই নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করা যায়। এটি ঘরের বা অফিসের নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থাকে সহজ করে তোলে।

৯. স্মার্ট টিভি ও অন্যান্য ডিভাইসে ইন্টারনেট: ওয়াইফাইয়ের সাহায্যে স্মার্ট টিভি এবং অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসগুলোতে সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। এটি বিনোদনের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে, যেখানে ব্যবহারকারী সহজেই স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো উপভোগ করতে পারেন।

ওয়াইফাই প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলেছে এবং ইন্টারনেটের ব্যবহারকে আরো কার্যকর ও সুবিধাজনক করে তুলেছে।

wi-fi এর কিছু অসুবিধা:

ওয়াইফাই প্রযুক্তি আমাদের জীবনে নানা সুবিধা নিয়ে এলেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা এবং অসুবিধাও রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন তৈরি করে। ওয়াইফাই ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে অসুবিধাগুলো দেখা যায়, সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো:

১. ডেটা ট্রান্সফারের সমস্যা: ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত থাকলে ডেটা ট্রান্সফার প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। বিশেষ করে যদি নেটওয়ার্কে অতিরিক্ত ডিভাইস সংযুক্ত থাকে, তবে ব্যান্ডউইথ কমে যায় এবং ইন্টারনেটের গতি প্রভাবিত হয়।

২. পাসওয়ার্ড নিরাপত্তার ঝুঁকি: যদি ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড সহজ বা দুর্বল হয়, তবে সেটি হ্যাক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একবার পাসওয়ার্ড হ্যাক হয়ে গেলে, হ্যাকাররা আপনার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করতে পারে এবং ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে।

৩. সীমিত এক্সেস রেঞ্জ: ওয়াইফাইয়ের সিগন্যাল একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব পর্যন্ত কার্যকর থাকে। সাধারণত, ওয়াইফাই সিগন্যালের কার্যকর রেঞ্জ ৩০ থেকে ১০০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এই রেঞ্জের বাইরে গেলে নেটওয়ার্ক সংযোগ দুর্বল হয়ে পড়ে বা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

৪. রেডিয়েশনের ক্ষতিকর প্রভাব: ওয়াইফাই থেকে নির্গত রেডিয়েশন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চমাত্রায় ওয়াইফাই রেডিয়েশনের সংস্পর্শে থাকলে স্বাস্থ্যগত সমস্যার সম্ভাবনা থাকতে পারে।

৫. নিরাপত্তা ঝুঁকি: ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা হলে, আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি হতে পারে বা আপনার ডিভাইস ক্ষতিকর কাজে ব্যবহার হতে পারে। দুর্বল নিরাপত্তার কারণে সাইবার আক্রমণের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ওয়াইফাই প্রযুক্তির সুবিধার পাশাপাশি এর এসব সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকিগুলো বিবেচনায় রেখে, ব্যবহারকারীদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করলে ওয়াইফাই ব্যবহারের ঝুঁকি অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব।

ওয়াইফাই চালাতে হলে কি কি প্রয়োজন?

WiFi বা ওয়্যারলেস ফিডেলিটি ব্যবহারের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ এবং তথ্য সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, বিশেষ করে যখন আপনি প্রথমবারের মতো ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করছেন। এই উপকরণগুলো ছাড়াই WiFi সংযোগ নেওয়া সম্ভব নয় বা নিতে গেলে নানা রকম ঝামেলা হতে পারে। আসুন জেনে নিই WiFi সংযোগের জন্য কী কী উপকরণ এবং প্রযুক্তি প্রয়োজন।

মডেম:

মডেম হলো ইন্টারনেট সংযোগের মূল মাধ্যম। এটি সরাসরি ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) এর সাথে যুক্ত থাকে এবং ইন্টারনেট ডেটা প্রাপ্তি ও প্রেরণ করে। মডেম দু'ভাবে সংযুক্ত হতে পারে: ফিক্সড বা ওয়্যারলেস। ফিক্সড মডেম সাধারণত তারের মাধ্যমে সংযোগ প্রদান করে, আর ওয়্যারলেস মডেম ইন্টারনেট সংযোগকে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে প্রেরণ করে। 

রাউটার:

রাউটার হলো মডেমের সাথে সংযুক্ত একটি ডিভাইস, যা ইন্টারনেট সিগন্যালকে ডিকোড বা বিশ্লেষণ করে। মডেম থেকে প্রাপ্ত ইন্টারনেট ডেটা রাউটার দ্বারা ডিকোড হয়ে আপনার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, বা অন্য যে কোনো স্মার্ট ডিভাইসে প্রেরণ করা হয়। রাউটার মূলত একটি ব্রিজের মতো কাজ করে, যা ইন্টারনেট ডেটাকে আপনার ডিভাইসের জন্য ব্যবহারযোগ্য করে তোলে।

ইউএসবি অ্যাডাপ্টার:

যদি আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপে WiFi রিসিভার না থাকে, তবে একটি ইউএসবি অ্যাডাপ্টারের প্রয়োজন হতে পারে। এই ডিভাইসটি রাউটার থেকে প্রাপ্ত ডেটাকে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে প্রেরণ করে এবং সেটিকে ইন্টারনেট সংযোগে রূপান্তরিত করে। ইউএসবি পোর্টের মাধ্যমে এটি কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হয় এবং আপনাকে ওয়্যারলেস ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়।

বিঃদ্রঃ
বাজারে এমন অনেক মডেম পাওয়া যায় যা একসাথে মডেম এবং রাউটার উভয় রূপে কাজ করতে পারে। এগুলো সাধারণত "মডেম-রাউটার কম্বো" নামে পরিচিত এবং এগুলোর মাধ্যমে আপনি আলাদা রাউটার ছাড়াই ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপন করতে পারবেন।

এই উপকরণগুলো সঠিকভাবে স্থাপন ও সংযুক্ত করলে আপনি সহজেই WiFi এর মাধ্যমে ইন্টারনেটের সুবিধা নিতে পারবেন।

ওয়াইফাই এর মাসিক বিল কেমন হয়? এবং অন্যান্য তথ্য: 

WiFi সংযোগের মাসিক বিল সাধারণত ইন্টারনেট স্পিডের ওপর নির্ভর করে। স্পিড যত বেশি, বিল তত বেশি হতে পারে। অনেকের মধ্যে এই ধারণা প্রচলিত যে WiFi এর বিল ব্যবহারের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে, তবে এটি সম্পূর্ণ ভুল। WiFi বিলের পরিমাণ নির্ধারিত হয় মূলত আপনার বেছে নেওয়া ইন্টারনেট প্ল্যান বা স্পিড প্যাকেজের ভিত্তিতে। 

WiFi বিলের বিভিন্নতা

WiFi এর মাসিক চার্জ বিভিন্ন এলাকায় ভিন্ন হতে পারে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার (ISP) গ্রাহকদের আকৃষ্ট করার জন্য দাম কমিয়ে দিতে পারে। আবার কিছু জায়গায় বিশেষ সুবিধা বা ছাড় দেওয়া হতে পারে, যা আপনাকে কম খরচে উচ্চ গতির ইন্টারনেট উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।

স্পিড অনুযায়ী বিল নির্ধারণ

WiFi সংযোগ নেওয়ার সময় অবশ্যই আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্পিড নির্বাচন করুন। এটি আপনার ইন্টারনেট অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করবে এবং মাসিক বিলেও পরিবর্তন আনবে। ইন্টারনেট স্পিড সাধারণত Mbps (মেগাবিটস পার সেকেন্ড) হিসেবে পরিমাপ করা হয়। আপনার ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরণ অনুযায়ী স্পিড বেছে নিন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি স্ট্রিমিং, অনলাইন গেমিং, বা বড় ফাইল ডাউনলোডের জন্য ইন্টারনেট ব্যবহার করেন, তবে উচ্চ স্পিডের প্যাকেজ বেছে নেওয়া উচিত। অন্যদিকে, সাধারণ ব্রাউজিং বা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য নিম্ন স্পিডের প্যাকেজ যথেষ্ট হতে পারে।

সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন চার্জ

বর্তমান ডিজিটাল যুগে, ইন্টারনেট সেবা সবার নাগালের মধ্যে রাখার জন্য সরকার কিছু নির্ধারিত মানদণ্ড স্থাপন করেছে। বাংলাদেশে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন WiFi চার্জ ৫০০ টাকা মাসিক নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এটি একটি বেসলাইন মূল্য, এবং প্রোভাইডার ও এলাকাভেদে এই চার্জ বাড়তে বা কমতে পারে।

WiFi এর গুরুত্ব

আজকের বিশ্বায়নের যুগে WiFi ব্যবহার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ নেটওয়ার্কিংই আধুনিক জীবনের মূল চাবিকাঠি। তথ্য আদান প্রদানের জন্য WiFi হলো একটি অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং সুবিধাজনক মাধ্যম। এটি একটি তারবিহীন প্রযুক্তি, যা আপনাকে সহজে এবং দ্রুততার সাথে ইন্টারনেট সেবা উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।

সঠিক তথ্য জানার প্রয়োজন

WiFi সংযোগ নেওয়ার আগে স্পিড, মাসিক চার্জ, এবং অন্যান্য শর্ত সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞান থাকা জরুরি। সঠিক তথ্য জেনে এবং আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা প্যাকেজটি বেছে নিয়ে WiFi সংযোগ নিন। নিরাপদে এবং দক্ষতার সাথে উচ্চ প্রযুক্তির এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করুন এবং বিশ্বের সাথে সংযুক্ত থাকুন।