ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে কীভাবে পরীক্ষা করবেন

 প্রকাশ: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:২৮ পূর্বাহ্ন   |   মোবাইল , টিপস ও গাইড

ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে কীভাবে পরীক্ষা করবেন
ব্যবহৃত ফোন কেনার সময় একটু সতর্কতা ও কিছু সহজ পরীক্ষা-নিরীক্ষা আপনাকে চমৎকার একটি ডিভাইস পেতে সহায়ক হতে পারে। আপনার বাজেটের মধ্যে আধুনিক ফিচারসমৃদ্ধ একটি ফোন পেতে ব্যবহৃত ফোন কেনা নিঃসন্দেহে লাভজনক হতে পারে। কিন্তু ব্যবহৃত ডিভাইসের ক্ষেত্রে কিছু জটিলতা থেকে যায়—ফোনের হার্ডওয়্যার, ব্যাটারি, ক্যামেরা, সফটওয়্যারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ঠিকঠাক আছে কিনা তা যাচাই করা অত্যাবশ্যক। সঠিকভাবে যাচাই না করলে আপনি প্রাথমিকভাবে টাকা বাঁচালেও, পরবর্তীতে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন। তাই ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব এই ব্লগ পোস্টে।

১. ফোনের বাহ্যিক অবস্থার পরীক্ষা করুন:

ব্যবহৃত ফোন কেনার সময় প্রথম যে বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে তা হলো ফোনের বাহ্যিক অবস্থা। এটি কেবলমাত্র ফোনের সুন্দর চেহারাই নয়, বরং ফোনের দৈনন্দিন ব্যবহারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাহ্যিক অবস্থা ভালো না হলে, দীর্ঘমেয়াদে তা ফোনের কার্যকারিতায় প্রভাব ফেলতে পারে। তাই ফোনটি কেনার আগে কিছু বিষয় বিশদভাবে যাচাই করা জরুরি।

প্রথমত, স্ক্রিন এবং বডির অবস্থা খুব ভালোভাবে দেখতে হবে। স্ক্রিনে বড় ধরনের কোনো স্ক্র্যাচ বা দাগ রয়েছে কিনা, তা খেয়াল করুন। ফোনের বডিতেও যদি অতিরিক্ত স্ক্র্যাচ থাকে, তাহলে ধরে নেওয়া যায় ফোনটি ব্যবহারের সময় অসাবধানতার শিকার হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র স্ক্র্যাচ সাধারণত সমস্যা করে না, কিন্তু বড় স্ক্র্যাচ থাকলে তা পরবর্তীতে স্ক্রিনের ভেতরের অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

পরবর্তী পর্যায়ে, চার্জিং পোর্ট এবং হেডফোন জ্যাক পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চার্জিং পোর্ট যদি ঠিকঠাক কাজ না করে বা শিথিল হয়ে থাকে, তবে ফোন চার্জ নিতে সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও, যদি আপনার ফোনে হেডফোন জ্যাক থাকে, সেটি ভালোভাবে কাজ করছে কিনা তা যাচাই করুন, কারণ এটি মিউজিক এবং কলের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

এছাড়া, ফোনের ভলিউম এবং পাওয়ার বাটন ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, তাও দেখতে হবে। ফোনের নিয়মিত ব্যবহারে বাটনের কার্যকারিতা অপরিহার্য, কারণ ভলিউম বা পাওয়ার বাটন সঠিকভাবে কাজ না করলে তা ফোন ব্যবহারে সমস্যা তৈরি করবে। 

সবশেষে, ফোনের ক্যামেরা এবং ফ্ল্যাশ পরীক্ষা করতে হবে। ক্যামেরা ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা এবং ছবি তোলার সময় কোনো অসুবিধা হচ্ছে কিনা তা যাচাই করুন। ফ্ল্যাশও ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, সেটিও নিশ্চিত করতে হবে, কারণ রাতের বেলা ছবি তোলার সময় ফ্ল্যাশ অত্যন্ত দরকারি হয়ে ওঠে। 

ফোনের এই বাহ্যিক বিষয়গুলো ভালোভাবে পরীক্ষা করা হলে, আপনি একটি মানসম্মত এবং কার্যকরী ফোন কিনতে পারবেন।

২. ডিসপ্লে ও টাচস্ক্রিন পরীক্ষা (Display & Touchscreen Test)

ফোনের ডিসপ্লে এবং টাচস্ক্রিনের কার্যকারিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এ দুটি ফিচারের ওপরই আপনার পুরো ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নির্ভর করে। তাই ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে ডিসপ্লে ও টাচস্ক্রিনের অবস্থা ভালোভাবে যাচাই করা আবশ্যক।

প্রথমেই নজর দিতে হবে ডিসপ্লের মানের দিকে। একটি ভালো মানের ডিসপ্লে দেখতে ঝকঝকে এবং স্পষ্ট হবে। তবে ব্যবহৃত ফোনে অনেক সময় স্ক্রিনের ভেতরে কিছু সমস্যা দেখা দেয়, যেমন ডেড পিক্সেল। ডেড পিক্সেল হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে স্ক্রিনের কিছু অংশ কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং কালো বা সাদা রঙের ছোট ছোট বিন্দুর মতো দেখা যায়। এটি পরীক্ষার জন্য ফোনের ডিসপ্লেতে কোনো নির্দিষ্ট রঙের ছবি বা ভিডিও চালাতে পারেন, যাতে সহজেই বোঝা যায় যে স্ক্রিনের কোনো অংশ অকেজো হয়ে আছে কিনা। যদি কোনো স্থানে ডেড পিক্সেল দেখা যায়, তাহলে সেটি ফোনের ডিসপ্লের মানকে প্রভাবিত করবে এবং দীর্ঘমেয়াদে আরও বড় সমস্যার দিকে ইঙ্গিত করতে পারে। তাই ডেড পিক্সেল বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখা উচিত।

এরপর, টাচস্ক্রিনের কার্যকারিতা যাচাই করতে হবে। আজকালকার স্মার্টফোনে টাচস্ক্রিন একটি অপরিহার্য উপাদান, এবং এর সঠিক কাজ না করলে পুরো ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফোনের টাচস্ক্রিন কতটা দ্রুত এবং সঠিকভাবে কাজ করছে, তা পরীক্ষার জন্য স্ক্রিনের বিভিন্ন জায়গায় স্পর্শ করে দেখুন। ফোনের প্রতিটি অংশে স্পর্শ করলে স্ক্রিন কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানায়, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভালো মানের টাচস্ক্রিন সাধারণত একদম মসৃণ ও দ্রুত সাড়া দেয়। যদি কোথাও কোনো বিলম্ব বা অসুবিধা হয়, তবে বুঝতে হবে ফোনের টাচস্ক্রিনে কোনো সমস্যা থাকতে পারে।

এছাড়া, কীবোর্ডে টাইপিং করতে গিয়ে দেখুন প্রতিটি স্পর্শ ঠিকমতো কাজ করছে কিনা। কেবল স্ক্রিনের কেন্দ্রে নয়, বরং কোণাগুলোতেও টাচ রেসপন্স সঠিক কিনা তা পরীক্ষা করুন। কিছু পুরনো বা ব্যবহৃত ফোনে কোণাগুলোতে টাচ ঠিকমতো কাজ না করার প্রবণতা দেখা যায়, যা পরবর্তীতে আরও জটিল সমস্যা তৈরি করতে পারে।

অতএব, ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে ডিসপ্লে ও টাচস্ক্রিনের অবস্থা খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এটি নিশ্চিত করতে পারলে আপনি জানবেন ফোনের এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপাদান ঠিকঠাক কাজ করছে এবং আপনার ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা হবে যথাযথ।

৩. ব্যাটারি অবস্থা যাচাই (Battery Health Test)

ব্যবহৃত ফোন কেনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর একটি হলো এর ব্যাটারির অবস্থা। ফোনের ব্যাটারি একটি মেশিনের ইঞ্জিনের মতোই, যা সঠিকভাবে কাজ না করলে আপনার পুরো অভিজ্ঞতাই নষ্ট হয়ে যেতে পারে। সাধারণত ব্যবহৃত ফোনের ব্যাটারির কার্যক্ষমতা নতুন ফোনের মতো থাকে না, কারণ ব্যাটারি নির্দিষ্ট সময়ের পরে তার কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। তাই ফোন কেনার আগে অবশ্যই ব্যাটারির অবস্থা খুঁটিয়ে দেখা প্রয়োজন।

প্রথমেই, ব্যাটারির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত। অনেক ফোনের সেটিংসে সরাসরি ব্যাটারি হেলথ চেক করার অপশন থাকে। এই অপশনটি ফোনের ব্যাটারি কতটা সক্ষম তা সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়। যদি আপনার কেনার ফোনে এই অপশনটি না থাকে, তাহলে আপনি নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ ব্যবহার করে ব্যাটারির অবস্থা যাচাই করতে পারেন। এই ধরনের অ্যাপ ব্যাটারির চার্জিং সাইকেল, বর্তমান ক্ষমতা এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহার কেমন হবে তা সম্পর্কে বিশদ তথ্য প্রদান করে। 

ব্যাটারি সাইকেল বলতে বোঝায়, ফোনের ব্যাটারি পূর্ণ চার্জ হয়ে খালি হওয়ার যে চক্র সেটি। একটি ব্যাটারির নির্দিষ্ট সংখ্যক সাইকেল থাকে, তারপরে এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়। ফোনটি ব্যবহারের সময় কতটি ব্যাটারি সাইকেল পূর্ণ করেছে, তা জানা থাকলে আপনি অনুমান করতে পারবেন, এর ব্যাটারি কতটা কার্যকর থাকবে। সাধারণত ৩০০ থেকে ৫০০ চার্জিং সাইকেলের পর ব্যাটারির ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। যদি ফোনের ব্যাটারি সাইকেলের সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে, তবে তা দীর্ঘমেয়াদে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করতে পারে।

এছাড়া, ব্যাটারির চার্জিং স্পিড এবং চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতাও পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। ব্যবহৃত ফোনের ক্ষেত্রে চার্জিং স্পিড অনেক সময় ধীর হয়ে যেতে পারে, কারণ দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহৃত হলে ব্যাটারির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই ফোনটি চার্জ নিতে কতটুকু সময় নিচ্ছে এবং চার্জ হয়ে যাওয়ার পর কতক্ষণ পর্যন্ত ব্যাটারি সচল থাকে তা যাচাই করা উচিত। ফোনটি দ্রুত চার্জ নিচ্ছে কিনা এবং পুরো চার্জ হওয়ার পর তা দীর্ঘ সময় ধরে ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, তা ভালোভাবে দেখে নেওয়া প্রয়োজন।

আরেকটি বিষয় হলো, চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা। আপনি একটি ফোনে ফুল চার্জ করে তা কয়েক ঘণ্টা ব্যবহার করে দেখুন। যদি ব্যাটারি দ্রুত ফুরিয়ে যায়, তবে ফোনটির ব্যাটারিতে সমস্যা থাকতে পারে। একটি ভালো ব্যাটারি সাধারণ ব্যবহারে দীর্ঘ সময় ধরে চার্জ ধরে রাখার ক্ষমতা রাখে।

ব্যাটারির অবস্থা ভালো না হলে, তা আপনার ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি নষ্ট করে দিতে পারে। চার্জিং সাইকেল বেশি হয়ে গেলে, ব্যাটারি দ্রুত চার্জ হারাতে শুরু করে এবং এর স্থায়িত্বও কমে যায়। তাছাড়া, চার্জ ধরে না রাখা বা চার্জ নিতে অনেক সময় নেওয়া, এই সবই ইঙ্গিত দেয় যে ব্যাটারি পরিবর্তন করা দরকার হতে পারে।

সুতরাং, ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে ব্যাটারির অবস্থা সঠিকভাবে যাচাই করা প্রয়োজন। ব্যাটারি যত ভালো থাকবে, ফোন তত বেশি দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহার করা সম্ভব হবে, এবং এটি আপনার ফোনের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

৪. সফটওয়্যার এবং হার্ডওয়্যার পরীক্ষা (Software & Hardware Check)

ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের অবস্থা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। একটি ফোনের পারফরম্যান্স মূলত নির্ভর করে তার অপারেটিং সিস্টেম, প্রসেসর, এবং র‍্যামের উপর। তাই ফোনটি আপনার প্রয়োজন মেটাতে পারবে কিনা তা নিশ্চিত করতে সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার ভালোভাবে পরীক্ষা করতে হবে।

প্রথমেই ফোনের অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) পরীক্ষা করা উচিত। ফোনে সর্বশেষ অপারেটিং সিস্টেম ভার্সন ইনস্টল করা আছে কিনা তা যাচাই করুন। নতুন ওএস ফোনের পারফরম্যান্স বাড়ায়, বাগ ঠিক করে এবং নতুন ফিচার যোগ করে। যদি ফোনটি পুরনো ওএস ভার্সনে চলমান হয় এবং আপডেট করার কোনো অপশন না থাকে, তাহলে তা ভবিষ্যতে সমস্যা তৈরি করতে পারে। অনেক সময় পুরনো ওএস ব্যবহার করলে কিছু অ্যাপ সঠিকভাবে কাজ করে না, এবং ফোনের নিরাপত্তাও হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। তাই আপডেট থাকা একটি ফোন বেছে নেওয়া উচিত, যা দীর্ঘ সময় ধরে সফটওয়্যার সাপোর্ট পাবে।

এরপর, ফোনের প্রসেসর এবং র‍্যামের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা জরুরি। প্রসেসর হলো ফোনের মস্তিষ্ক, যা ফোনের সকল কাজ পরিচালনা করে। একটি শক্তিশালী প্রসেসর আপনার ফোনের পারফরম্যান্সকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে, এবং আপনি যদি গেমিং, মাল্টিটাস্কিং বা ভারী অ্যাপ ব্যবহার করতে চান, তবে প্রসেসরের ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়াও, ফোনের র‍্যাম বা মেমরি নিশ্চিত করে যে ফোনটি একসাথে কতগুলো কাজ করতে পারবে। র‍্যাম যত বেশি হবে, ফোনের পারফরম্যান্স তত মসৃণ হবে। তাই একটি ভালো ব্যবহৃত ফোনে পর্যাপ্ত পরিমাণ র‍্যাম থাকা উচিত, যা আপনার দৈনন্দিন কাজের চাহিদা পূরণ করতে পারবে। 

ফোনের হার্ডওয়্যার পরীক্ষা করতে কিছু নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করতে পারেন, যা ফোনের প্রসেসর ও র‍্যামের অবস্থা সম্পর্কে বিশদ তথ্য দেয়। এ ধরনের অ্যাপগুলি ফোনের অভ্যন্তরীণ কার্যক্ষমতা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা প্রদান করে এবং ফোনটি আপনার চাহিদা অনুযায়ী কাজ করবে কিনা তা সহজেই বুঝতে সাহায্য করে। 

এছাড়া, ফোনে কোনো অতিরিক্ত হার্ডওয়্যার সমস্যা রয়েছে কিনা তা যাচাই করা দরকার। যেমন ফোনের সেন্সর, ক্যামেরা লেন্স বা অডিও সিস্টেমের মতো উপাদানগুলিও ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা তা দেখা উচিত। একটি হার্ডওয়্যার সমস্যা থাকলে ফোনের অনেক সুবিধা ভোগ করতে অসুবিধা হতে পারে, যেমন সঠিকভাবে ছবি তোলা বা স্পষ্ট অডিও পাওয়া। 

সব মিলিয়ে, সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের সঠিক পরীক্ষা করলে আপনি বুঝতে পারবেন ফোনটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা। সফটওয়্যার আপডেট এবং শক্তিশালী হার্ডওয়্যার নিশ্চিত করতে পারলে, আপনি একটি ভালো ব্যবহৃত ফোনের মালিক হতে পারবেন যা দীর্ঘ সময় ধরে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করবে।

৫. ক্যামেরা এবং অডিও পরীক্ষা (Camera & Audio Test)

ক্যামেরা এবং অডিও সিস্টেম হলো স্মার্টফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফিচার, যা ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে পরীক্ষা করা অপরিহার্য। আজকাল ফোনের ক্যামেরা শুধু ছবি তোলা নয়, বরং দৈনন্দিন জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো ধরে রাখার একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে। তেমনি, অডিও সিস্টেমও কল, গান শোনা বা ভিডিও দেখার সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে ক্যামেরা এবং অডিও সিস্টেমের সঠিক কার্যকারিতা নিশ্চিত করা উচিত।

প্রথমেই, ক্যামেরার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা দরকার। ফোনের ক্যামেরা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা তা যাচাই করতে একাধিক ছবি তুলুন। দেখুন, ক্যামেরা দ্রুত ফোকাস করছে কিনা এবং ফোকাস করার সময় কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা। ফোকাস করতে যদি বেশি সময় লাগে বা ছবি ঝাপসা হয়ে যায়, তবে বুঝতে হবে ক্যামেরায় কোনো ত্রুটি থাকতে পারে। ছবি তোলার সময় যদি কোনো ল্যাগ বা বিলম্ব দেখা যায়, তবে সেটিও সমস্যা নির্দেশ করে। ক্যামেরার সমস্ত মোড পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যেমন প্যানোরামা, পোর্ট্রেট এবং নাইট মোড। এছাড়া, ভিডিও রেকর্ড করার সময় কোনো ল্যাগ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কোয়ালিটিতে ভিডিও ধারণ করে পরীক্ষা করুন। একটি ভালো মানের ক্যামেরা দ্রুত ফোকাস করে এবং ছবির মান সঠিক রাখে।

এরপর আসে অডিও সিস্টেমের পরীক্ষা। ফোনের স্পিকার এবং মাইক্রোফোন পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একটি ফোনে কল করার পাশাপাশি গান শোনা, ভিডিও দেখার সময় স্পিকারের মান বড় ভূমিকা পালন করে। ফোনের স্পিকার ভালোভাবে কাজ করছে কিনা তা পরীক্ষা করতে উচ্চ শব্দে গান বা ভিডিও চালিয়ে দেখুন। স্পিকার থেকে আসা শব্দ পরিষ্কার এবং ঝামেলাবিহীন হওয়া উচিত। শব্দে কোনো বিকৃতি বা ফাটল থাকলে, সেটি ফোনের স্পিকারের ত্রুটি নির্দেশ করে। 

মাইক্রোফোন পরীক্ষার জন্য ফোন থেকে কল করে দেখতে পারেন। দেখুন, আপনার কথা অন্য প্রান্তের মানুষ ঠিকভাবে শুনতে পাচ্ছে কিনা। এছাড়া, অডিও রেকর্ড করে শুনে দেখুন মাইক্রোফোন সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা। যদি আপনার কথা রেকর্ডের সময় পরিষ্কার না শোনা যায় বা ভাঙা ভাঙা শোনায়, তবে ফোনের মাইক্রোফোনে সমস্যা থাকতে পারে।

অডিও সিস্টেমে যদি কোনো সমস্যা থাকে, তবে ফোনে কল করা কিংবা অন্যান্য অডিও সম্পর্কিত কাজগুলোয় অসুবিধা হবে। ভালো মানের ক্যামেরা ও স্পিকার একটি ফোনের অন্যতম শক্তিশালী দিক, যা ফোনের মাল্টিমিডিয়া অভিজ্ঞতাকে উন্নত করে।

অতএব, ব্যবহৃত ফোন কেনার সময় ক্যামেরা এবং অডিও সিস্টেমের পরীক্ষা একান্ত জরুরি। সঠিকভাবে পরীক্ষা করলে আপনি বুঝতে পারবেন, ফোনটি আপনার প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে কিনা এবং দীর্ঘমেয়াদী ব্যবহারে সুবিধা নিশ্চিত হবে কিনা।

৬. IMEI এবং ফোনের আইডেন্টিটি যাচাই (IMEI & Phone Identity Check)

ব্যবহৃত ফোন কেনার ক্ষেত্রে যে একটি বিষয় একদম অবহেলা করা উচিত নয়, তা হলো ফোনের আসল পরিচয় যাচাই করা। আপনি যখন একটি ফোন কিনতে যাচ্ছেন, তখন এটি নিশ্চিত করতে হবে যে ফোনটি বৈধ এবং এর মালিকানা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এ ক্ষেত্রে IMEI নম্বর এবং ফোনের আইডেন্টিটি যাচাই করা সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি।

প্রথমেই, IMEI নম্বর চেক করা জরুরি। প্রতিটি ফোনের একটি বিশেষ আইডেন্টিটি নম্বর থাকে, যাকে বলা হয় IMEI (International Mobile Equipment Identity) নম্বর। এটি মূলত ফোনটির বৈশিষ্ট্যগত পরিচয় বহন করে এবং প্রতিটি ফোনের জন্য আলাদা হয়। ফোনের আসল পরিচয় নিশ্চিত করতে আপনাকে ফোনের IMEI নম্বর যাচাই করতে হবে। ফোনের বক্স বা রসিদে থাকা IMEI নম্বর এবং ফোনে থাকা IMEI নম্বর মিলিয়ে দেখতে হবে। ফোনের IMEI নম্বর পাওয়ার জন্য আপনি ফোনের ডায়াল প্যাডে *#06# চাপতে পারেন, এটি সঙ্গে সঙ্গেই স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে। যদি ফোনের বক্সের নম্বর এবং ফোনের ভেতরে থাকা IMEI নম্বরের মধ্যে কোনো অসামঞ্জস্য থাকে, তবে এটি হতে পারে একটি সংকেত যে ফোনটি নিয়ে কিছু সমস্যা থাকতে পারে।

এরপর, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে ফোনটি চুরি হওয়া ফোন নয়। ব্যবহৃত ফোন কেনার ক্ষেত্রে একটি বড় ঝুঁকি হলো চুরি হওয়া বা হারানো ফোন কেনা। এটি আইনত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে এবং আপনাকে পরবর্তীতে সমস্যায় ফেলতে পারে। তাই, IMEI নম্বর দিয়ে অনলাইনে চেক করে দেখুন যে ফোনটি চুরি হওয়া কিনা। বেশ কিছু ওয়েবসাইট এবং সরকারি প্ল্যাটফর্ম রয়েছে যেখানে আপনি সহজেই IMEI নম্বর দিয়ে ফোনটি কোনো চুরির তালিকায় রয়েছে কিনা তা যাচাই করতে পারেন। এ পদ্ধতি আপনাকে নিশ্চিত করবে যে ফোনটি নিরাপদ এবং আপনি এটি বৈধভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

IMEI নম্বর পরীক্ষা করে আপনি ফোনের আসল পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেন, যা ফোনের ব্যবহার এবং নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চুরি হওয়া ফোন বা IMEI নম্বর নিয়ে অসামঞ্জস্য থাকলে সেটি আপনার জন্য ভবিষ্যতে অনেক সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে এই ছোট অথচ গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি কখনোই এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়।

ফোনের আইডেন্টিটি যাচাই করে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে আপনি যে ফোনটি কিনতে যাচ্ছেন তা সম্পূর্ণ বৈধ এবং কোনো ধরনের আইনি জটিলতায় জড়ানো নেই। এই পরীক্ষা করার পর আপনার ফোন কেনার প্রক্রিয়া অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং নিরাপদ হবে।

৭. ফোনের আনলক স্ট্যাটাস পরীক্ষা (Unlocked Status Check)

ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে ফোনটি আনলকড কিনা। ফোনের আনলক স্ট্যাটাস নির্ধারণ করে যে আপনি কোন মোবাইল অপারেটরের সিম ব্যবহার করতে পারবেন। এটি এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক যা যদি ঠিকমতো পরীক্ষা না করা হয়, তবে আপনি ফোনটি কিনে ফেললেও নিজের পছন্দের সিম ব্যবহার করতে পারবেন না, যা পরে বড় ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে।

প্রথমেই আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে যে ফোনটি আনলকড কিনা। আনলকড ফোন মানে হলো, ফোনটি যেকোনো মোবাইল নেটওয়ার্কের সিম কার্ড সাপোর্ট করতে পারবে। অনেক ফোন শুধুমাত্র নির্দিষ্ট মোবাইল অপারেটরের সিম কার্ডে কাজ করে, যাকে বলা হয় লকড ফোন। এমন একটি ফোন যদি কিনে ফেলেন যা আপনার পছন্দের অপারেটরের সিম সাপোর্ট করে না, তবে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যাবে এবং আপনাকে হয়তো ফোনটি আবার আনলক করতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করতে হবে। 

ফোনটি আনলকড কিনা তা পরীক্ষা করার সহজ উপায় হলো বিভিন্ন অপারেটরের সিম কার্ড ফোনে প্রবেশ করানো এবং দেখা, সেগুলো কাজ করছে কিনা। আপনি যদি দেখেন, একটি সিম কার্ড কাজ করছে এবং অন্যটি কাজ করছে না, তাহলে ফোনটি সম্ভবত লকড। আনলকড ফোন হলে যেকোনো অপারেটরের সিম কার্ড সঠিকভাবে কাজ করবে এবং আপনি সহজেই আপনার পছন্দের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন।

এছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে ফোনের সেটিংসেও ফোনের আনলক স্ট্যাটাস দেখা যায়। অনেক সময় ব্যবহৃত ফোনে আনলক করার দাবি করা হলেও সেটি আসলে লকড থাকে, তাই নিজের মতো করে এই বিষয়টি যাচাই করা জরুরি। 

ফোনের আনলক স্ট্যাটাস সঠিকভাবে পরীক্ষা করলে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন যে ফোনটি আপনার পছন্দমতো অপারেটরের সিম কার্ড সাপোর্ট করবে এবং আপনি ফোনটি কিনে কোনো অপ্রত্যাশিত সমস্যার সম্মুখীন হবেন না।

৮. রিসেট এবং ফ্যাক্টরি সেটিংস (Reset & Factory Settings)

ব্যবহৃত ফোন কেনার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ হলো ফোনটি রিসেট এবং ফ্যাক্টরি সেটিংসে ফেরানো হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করা। ফোনটির পূর্বের মালিকের সমস্ত তথ্য এবং সেটিংস মুছে নতুন করে শুরু করা অত্যন্ত জরুরি, কারণ আপনি ফোনটি ব্যবহারের আগে এটি সম্পূর্ণ ক্লিন অবস্থায় পেতে চাইবেন। পূর্ববর্তী কোনো ব্যক্তিগত ডেটা থেকে শুরু করে ফোনের আগে করা কনফিগারেশনগুলো নতুন ব্যবহারকারীর জন্য সমস্যার কারণ হতে পারে, তাই ফ্যাক্টরি রিসেট করা অত্যাবশ্যক।

প্রথমেই, ফোনটি কেনার পর নিশ্চিত করতে হবে যে সেটি ফ্যাক্টরি রিসেট করা হয়েছে কিনা। ফ্যাক্টরি রিসেটের মাধ্যমে ফোনটি একেবারে নতুন অবস্থায় ফিরে আসে, যার ফলে পূর্বের মালিকের সকল ব্যক্তিগত তথ্য, অ্যাপ, ফাইল, এবং কনফিগারেশন সম্পূর্ণরূপে মুছে যায়। যদি আপনি ফোনটি কিনে দেখেন যে পূর্বের মালিকের কোনো তথ্য বা অ্যাপ এখনও ফোনে রয়ে গেছে, তাহলে বুঝতে হবে ফোনটি ঠিকমতো রিসেট করা হয়নি। ফোনটি ফ্যাক্টরি রিসেট করা না হলে, সেটি আপনার ব্যবহারকালে নানা রকম সমস্যা তৈরি করতে পারে।

যদি ফ্যাক্টরি রিসেট না করা থাকে, তবে আপনি নিজেই সেটি করে নিতে পারেন। ফ্যাক্টরি রিসেট করার আগে, অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে প্রয়োজনীয় সব ফাইল এবং ডেটা ব্যাকআপ করা হয়েছে, কারণ রিসেটের পর ফোন থেকে সমস্ত ডেটা মুছে যাবে এবং তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হবে না। 

ফ্যাক্টরি রিসেট করার মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হবেন যে ফোনটি সম্পূর্ণ পরিষ্কার অবস্থায় আছে এবং এটি নতুনের মতো ব্যবহার করতে পারবেন। এছাড়া, ফোনে পূর্বের কোনো অ্যাকাউন্ট বা সেটিংস থাকলে তা রিসেটের মাধ্যমে সরিয়ে ফেলা হয়, যা ফোনের নিরাপত্তা এবং ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। 

ফ্যাক্টরি রিসেট করার পর, আপনি আপনার নিজের প্রয়োজন অনুযায়ী নতুন করে সেটিংস কনফিগার করতে পারেন এবং ফোনটি নিজের মতো করে ব্যবহার শুরু করতে পারেন। এভাবে আপনি পুরোনো ফোনে নতুন ফোনের মতো অভিজ্ঞতা পাবেন এবং যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকবেন।

উপসংহার

ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যাচাই করে নিলে আপনি একটি ভালো মানের ফোন পেতে পারেন। উপরে উল্লেখিত পরামর্শগুলো অনুসরণ করলে আপনি ব্যবহার করা ফোন কেনার ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকবেন এবং ভালো ডিল পাবেন। আশা করছি আজকের এই পোস্টটি আপনার ভীষণ পছন্দ হয়েছে যদি পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে বন্ধুদের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না। আজকের মত এখানেই বিদায় নিচ্ছি পরবর্তীতে আবার দেখা হবে ততক্ষণ পর্যন্ত ভালো থাকুন ধন্যবাদ।